সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
মধু হলো একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার যা মৌমাছি ফুলের রস থেকে তৈরি করে। সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। মধুতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ভিটামিন ও এনজাইম থাকে। মধুতে সর্বমোট ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। এগুলো শরীরকে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করে। এটি ব্যথা উপশমকারী, জীবাণুনাশক ইত্যাদি হিসেবে কাজ করে। আপনি আমাদের এই পোস্টটি পড়লে সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা জানতে পারবেন।
মধুর উপকারিতা, ত্বকের জন্য মধু কতটা উপকারী, মধু খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। এগুলো সম্পর্কে আজকের এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি সব কিছু সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন, তাহলে আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন।
মধুর উপকারিতা
দীর্ঘকাল ধরে খাদ্যের পাশাপাশি ওষুধের বিকল্প হিসেবে মধু ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মধু খেয়ে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, কিন্তু তাদের অনেকেই হয়তো জানেন না মধু খাওয়ার উপকারিতা, সঠিক নিয়মে মধু খাওয়া কিংবা মধুর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। আসুন আমরা জেনে নিই মধুতে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়-
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অম্লত্ব দূর হয়ে যায়।
রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে। কারণ মধুর মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণে কপার লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
ওজন কমাতেঃ মধুতে কোন চর্বি নেই। পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায়, যার ফলে ওজন কমে যায়।
দাঁতও হাড় গঠনেঃ মধুর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত, ভঙ্গুরতা রোধ করে।
হজমে সহায়তাঃ মধুর মধ্যে যে শর্করা পাওয়া যায় তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেসটিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। যারা পেটের সমস্যায় ভুগেন তাদের জন্য মধু বেশ কার্যকারী।
হাঁপানি রোগঃ আধা গ্রাম গুঁড়ো গোলমরিচের সঙ্গে সমপরিমাণে মধু এবং আদা মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিনে অন্তত তিনবার খাবেন। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
উচ্চ রক্তচাপঃ দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মিশাবেন। সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রণটি খাবেন। আপনি যদি প্রতিনিয়ত এটা ব্যবহার করেন তাহলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমে যাবে।
যৌন দুর্বলতায়ঃ পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে, তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান, তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
রূপচর্চায়ঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মধু ব্যবহার করা যায়। মুখে ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্য মধু ব্যবহার করা হয়।
ত্বকে মধুর উপকারিতা
মধু খাওয়ার পাশাপাশি রূপচর্চার জন্যও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে আমরা জানি না, মধু সঠিক নিয়মে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে, চুলের যত্নে মধু বেশ কার্যকারী। আসুন জেনে নেই সঠিক নিয়মে কিভাবে মধু ব্যবহার করতে হয়-
ত্বকের কালো দাগ দূর করতেঃ বিভিন্ন কারণে ত্বকে দাগ হতে পারে, যা ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। মধুর ভিতর অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল থাকে, যা ত্বকের দাগ উঠিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নারকেল তেল বা জলপাইয়ের তেল, ত্বকের মরা কোষ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন হালকা মালিশে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বক সুস্থ রাখতে ও কোষ গঠনে সাহায্য করে।
রোদে পোড়া ভাব দূর করতেঃ মধু ত্বকের গভীরের আদ্রতা ধরে রাখে। মধু এবং অ্যালোভেরা দুটোতেই আছে শক্তিশালী অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি, যা ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে। মধুর সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে, মুখে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখার পরে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে আপনার মুখে আর কোন দাগ থাকবে না।
লোমকূপে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতেঃ মধুতে আছে এনজাইম যা ত্বক ও লোমকূপের গভীরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে। এছাড়াও মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, জবা বা নারকেল তেল ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে।
ত্বকের নমনীয়তায়ঃ মধু এক ধরনের প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি বাতাস থেকে জলীয় কণা ত্বকের ভিতরে টেনে নেয় যা ত্বকের গভীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে মধু বেশ কার্যকারী। নিয়মিত এক টেবিল চামচ পরিমাণ মধু পরিষ্কার ও শুষ্ক ত্বকে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে ত্বক কমলা মসৃণ হবে।
কমল ভাবে ত্বক পরিষ্কারঃ মধু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এনজাইম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ। যা ত্বক কে পরিষ্কার, উজ্জল ও মসৃণ করে। অন্যদিকে বেকিং সোডা ত্বকের গভীর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের মৃতকোষ তুলে, নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে।
ব্রণ দূর করতেঃ কিশোরী থেকে শুরু করে মোটামুটি সব বয়সের মানুষের জন্য ব্রণ একটি চিন্তার কারণ। মধুর এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের লালচে ভাব ও জ্বালাপোড়া কমিয়ে ত্বক ব্রণের হাত থেকে রক্ষা করে।
চুল কন্ডিশনারঃ মধুতে থাকা এনজাইম অনুজ্জ্বল চুলকে উজ্জ্বল করে। পাশাপাশি নারিকেল তেল চামড়ার বাহিরের স্তরে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। এক চামচ মধুর সঙ্গে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে রুক্ষ চুলে ভালোমতো মালিশ করতে হবে। ৩০ মিনিট রেখে তারপর ভালোভাবে মাথা পরিষ্কার করতে হবে।
চুল রং করতেঃ চুলের হাইলাইট বর্তমান ফ্যাশনে দারুন জনপ্রিয়। তবে রাসায়নিক রং চুলের ক্ষতি করতে পারে এই ভয়ে অনেকেই চুলে রং করা এড়িয়ে যান। তবে মধুর বিশেষ কিছু উপাদান আসে যা ধীরে ধীরে চুলের রং হালকা করতে সাহায্য করে অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে চুল হাইলাইটস করার জন্য মধু দারুন কার্যকারী। পরিমাণ মতো মধু নিয়ে তার মধ্যে অল্প একটু পানি দিয়ে আপনার চুলে ঘণ্টা খানিকের মতো লাগিয়ে রাখুন। পরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এটি ব্যবহার করবেন।
রাতে মধু খেলে কি হয়
রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু খেলে শরীরের নানা রকম সমস্যা দূর হয়। মধুর মধ্যে পাওয়া যায় ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬, কার্বোহাইড্রেট, এমিনো এসিড ইত্যাদি। রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা হয়তো জানি আবার কেউ জানিনা। তবে না জানা লোকের সংখ্যা বেশি। আমরা শুধু মধু খেয়ে যাই কিন্তু মধুর উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। মধু খেলে যে কিছু স্পেশাল উপকারিতা পাওয়া যায় আমরা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো-
কাশি দূর করেঃ মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যা কফকে পাতলা করে, এবং তা বাহিরে বের করে নিয়ে আসতে সহায়তা করে। এজন্য প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু খাবেন।
ত্বকের জন্য উপকারীঃ মুখের রুক্ষতা, শুষ্কতা দূর করতে মধু বেশ কার্যকারী। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মুখে মধু ব্যবহার করলে মুখের আদ্রতা ঠিক থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যাকেবলমাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে না, সাথে সাথে সংক্রমণ থেকেও মুক্তি দেয়। রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিয়ে পান করুন। এটি করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ব্রণের সমস্যা দূর করেঃ ত্বকের ব্রণ দূর করতে মধু বেশ কার্যকারী একটি উপাদান। মধুতে যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল থাকে তা ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে। আপনি রাতে ঘুমানোর আগে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে মধু লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন। এতে করে আপনার ব্রণ চিরতরে দূর হয়ে যাবে।
গলা ব্যথা দূর করতেঃ গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে মধু বেশ কার্যকারী। রাতে ঘুমানোর আগে মধুর সঙ্গে আদার রস মিশিয়ে খেলে, গলা ব্যাথা দূর হয়ে যাবে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতেঃ দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য মধু অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই চোখের সমস্যায় ভুগে থাকি। যার ফলে আমরা লেন্স বা চশমা ব্যবহার করি। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস করেন, তাহলে আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি হবে।
রক্ত ও রক্তনালী পরিষ্কার করেঃ আপনি যদি নিয়মিত মধু খান তাহলে আপনার রক্ত ও রক্তনালী দুটাই পরিষ্কার হবে। নিয়মিত মধু খেলে রক্তে থাকা দূষিত পদার্থ নিঃসরণ হয়। এর ফলে রক্তনালী বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পায়।
ওজন কমাতে মধুঃ মধু ওজন কমাতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কেউ যদি রাতে ঘুমানোর আগে একটু গরম পানি দিয়ে মধু মিশিয়ে খায় তাহলে সেটি ঘুমানো অবস্থায় পেটের চর্বি ধ্বংস করে। যার ফলে ওজন কমে যায়। তবে গরম পানির সাথে একটু লেবুর রস মিশ্রিত করতে পারলে বেশি ভালো। তবে এটি মনে রাখবেন রাতে খাওয়ার কমপক্ষে তিন ঘন্টা পরে মধু খেতে হবে।
চুলের জন্য উপকারীঃ মধুতে যে সকল পুষ্টি উপাদান থাকে তা চুলকে ঘন করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে।এছাড়াও অনেক রকম সমস্যা থাকে। নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে চুলের সকল সমস্যা দূর হয়ে যায়।
কালোজিরার উপকারিতা
আমাদের সকলের একটি পরিচিত একটি মসলা হয়েছে কালোজিরা। তবে মসলা হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি এটিকে আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও কবিরাজি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। সেই প্রাচীনকাল থেকে এটি নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করছে। কালোজিরার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, চলুন জেনে নেই-
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ কালোজিরাতে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক পদার্থ রয়েছে যা মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। এতে স্মরণ শক্তি বেড়ে যায় এছাড়াও এটি মেধার বিকাশে সাহায্য করে। এক চা-চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রং চায়ের সাথে এক চা চামচ কালে জিরা তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে, নিয়মিত সেবন করতে হবে। এটি দুশ্চিন্তাও দূর করে।
হজমে সাহায্য করেঃ প্রতিদিন সকালে এক থেকে দুই চামচ কালিজিরা বেটে পানির সাথে খেলে হজম শক্তি বাড়ে। এটি পেট ফাঁপা সমস্যা ও দূর করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেঃ কালিজিরা ত্বকের ব্রণ ও দাগ দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রস ও কালিজিরা তেল মিশিয়ে দিলে দুবার মুখে লাগাতে পারেন। এই দুটো একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।
মাথাব্যথা দূর করেঃ মাথা ব্যথা দূর করার জন্য কালোজিরা একটি পুরনো ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। এক থেকে দুই চামচ কালোজিরা তেল মাথায় ভালোভাবে মালিশ করলে মাথা ব্যথা দূর হয়। আপনি যদি প্রতিদিন একটু করে কালিজিরা তেল মালিশ করেন তাহলে আপনার মাথা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
অতিরিক্ত চর্বি কমায়ঃ ডায়েটের জন্য কালোজিরা অত্যন্ত কার্যকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের অতিরিক্ত মেয়ের বা চর্বি কমে যাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ এটি শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ পতঙ্গকে সতেজ রাখে। জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে, দেহে গড়তে প্রস্তুত থাকে এবং স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতি করে।
চুল পড়া বন্ধ করেঃ বর্তমান সময়ে চুল পড়া একটি অনেক বড় সমস্যা। এটাই সব বয়সী মানুষেরই হয়।এ সমস্যা দূর করতে আপনি প্রতিদিন কালিজিরা খেতে পারেন। এটি চুলের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।আপনি যদি আরো ভালো ফল পেতে চান, তাহলে কালোজিরা তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করুন।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ কালিজিরা নারী পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। নিয়মিত সেবন করলে পুরুষদের বীর্যের পরিমাণ বাড়ে এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এক চামচ মাখন, এক চামচ জাইতুন তেল এবং এক চামচ কালোজিরা তেল ও মধু প্রতিদিন তিনবার। চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ ধরে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
অনিয়মিত মাসিক সমস্যাঃ এটি মহিলাদের কমন সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি। নিয়মিত এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে, এক কাপ কালোজিরা তেল মিশিয়ে তিনবার খেলে উপকার পাওয়া যায়।
স্তনদূধ বাড়ায়ঃ প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সাথে খেতে হবে। এছাড়াও এক চামচ কালোজিরা তেল এক চামচ মধু দৈনিক তিনবার খেতে হবে। তাহলে আপনি ভালো রেজাল্ট পাবেন।
শিশুর দহি কম মানসিক বৃদ্ধিতেঃ দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানো অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরা তেল সেবন করা উচিত নয়। তবে মালিশ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
কালোজিরা অনেক রোগ নিরাময়ের ভূমিকা পালন করে-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এক চামচ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু সহ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কালোজিরা বা কালোজিরা তেল একসঙ্গে নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে রক্তচাপকে রাস করে।
দাঁতের ব্যথা দূর করেঃ কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। এটি জিহবা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মেরে ফেলতে সহায়তা করে।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি দূর করেঃ যাদের শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন খাবারের তালিকায় কালোজিরার ভোতা রেখে দিতে পারেন। এছাড়া আপনি এক চামচ কালোজিরা তেল এক কাপ দুধ বা রং চায়ের সাথে দৈনিক তিনবার করে নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাবেন। এটিই শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি থেকে আপনাকে দূরে রাখবে।
চর্মরোগ দূর করেঃ আপনার যেখানে চর্মরোগ বা চুলকানি দেখা দিবে আপনি সেখানে ভালোমতো কালোজিরা তেল মালিশ করবেন। প্রতিদিন তিনবার করে এক চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে, সমপরিমাণ কালোজিরা তেল, সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে, দুই থেকে তিন সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
পিঠে ব্যাথা দূর করেঃ কালোজিরা থেকে যে তেল বের হয় তা আমাদের দেহের দীর্ঘমেয়াদী কিউমেটিক এবং পিটে ব্যথা কমাতে বেশ সহায়তা করে। এছাড়াও সাধারণভাবে কালোজিরা খেয়েও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ এক চামচ পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এতে করে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ছাড়া এক কাপ চা এর সঙ্গে, এক চামচ কালোজিরা তেল, আবার আপনি ভাতের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ১০০ ভাগ কাজে দিবে।
হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেঃ এক চা চামচ কালোজিরা তেল সহ এক কাপ দুধ দৈনিক দুইবার করে খেতে হবে। আপনি চাইলে কালোজিরার তেল বুকে মালিশও করতে পারেন।
চোখের ব্যথা দূর করতেঃ রাতে ঘুমাবার আগে চোখের উভয় পাশে ও ভুরুতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন এবং এক কাপ গাজরের রসের সাথে একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুন। প্রয়োজনে নির্দেশিত হোমিও ও বায়োকেমিক ওষুধ সেবন করতে পারেন।
জ্বর দূর করতেঃ সকাল সন্ধ্যায় লেবুর রসের সাথে এক চামচ কালোজিরা তেল পান করুন, অথবা কালোজিরা গ্রহণ করুন।
ডায়রিয়া দূর করতেঃ ডায়রিয়া হলে, ডায়রিয়া ভালো করার জন্য ওষুধের পাশাপাশি আপনি কালোজিরা খেতে পারেন। এটি আপনার ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
মধুর স্বাস্থ্য গুণ সম্পর্কে যেমনভাবে বলে শেষ করা সম্ভব না, তেমনি ভাবে কালোজিরার উপকারিতা ও বলে শেষ করা যাবেনা। আপনি যদি এই দুটিকে একত্রে প্রতিদিন সকালে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে আপনি যে কতটা উপকৃত হবেন আপনি নিজেও জানেন না। আমরা আজকে আপনাদেরকে জানাবো এই দুটি আপনি একসঙ্গে খেলে কি কি উপকারিতা পাবেন-
- কালোজিরা ও মধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
- কালোজিরা ও মধু আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ পতঙ্গ সতেজ থাকে। এটি যে কোন জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
- নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে, যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- নারী পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরা ও মধু বেশ কার্যকারী। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কালোজিরা খেলে পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও মধু ও কালোজিরা পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দেয়।
- হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় কালোজিরা বেশ কার্যকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা খেলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়। আপনি যদি মধু এবং কালোজিরা একসঙ্গে খান তাহলে আরো বেশি উপকৃত হবেন।
- শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে কালোজিরা বেশ কার্যকারী উপাদান। নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খাওয়ালে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে দ্রুত। তবে দুই বছরের নিচে বাচ্চাকে খাওয়ানো যাবে না। যদি চান তাহলে তেল মালিশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
- কালোজিরার তেল আমাদের দেহের দীর্ঘমেয়াদি রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও সাধারণভাবে মধু এবং কালোজিরা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url