কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা - মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা

হলুদ একটি উপকারী উপাদান। এটি আমরা নানা জায়গায় নানা রকম ভাবে ব্যবহার করি, কিন্তু আমরা কি কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানি। আমরা অনেকেই তো জানি যে হলুদ চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। মোট কথা বলতে গেলে কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। 

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা অনেকেই কাঁচা হলুদ রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। বিশেষভাবে মেয়েরা একটু বেশি ব্যবহার করি ছেলেদের তুলনায়। কিন্তু আপনি কি মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন। চুলের যত্নে কাঁচা হলুদ কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, কাঁচা হলুদের উপকারিতা, কাঁচা হলুদের অপকারিতা ব্রণ দূর করতে কাঁচা হলুদ, সবকিছু সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন, যদি পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন।

চুলের যত্নে কাঁচা হলুদ 

আদিকাল থেকেই রূপচর্চার জন্য হলুদ ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি রান্নায় যেমন স্বাদ বাড়ায়, তেমনি ত্বকের যত্নেও হলুদ বেশ কার্যকারী। হলুদ ত্বকচর্চা ছাড়াও চুলের যত্নে বেস কার্যকারী। হলুদের হেয়ার প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া খুশকি দূর করে কাঁচা হলুদ। চুল ঝলমলে করতে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। 

চলুন জেনে নেই চুলের যত্নে কাঁচা হলুদ বা হলুদ বাটা কতটা কার্যকারী উপাদান এবং এটি কিভাবে ব্যবহার করবেন- 

  • চুলের বৃদ্ধিতেঃ মাথার নানাবিদ সমস্যা দূর করার পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে হলুদ। হলুদ গুড়ার সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে মাথার চুল বৃদ্ধি পায়।
  • চুল পড়া বন্ধ করেঃ চুল পড়া বন্ধ করতে নারকেল তেলের সঙ্গে হলুদ বাটা মিশিয়ে ভালোভাবে মাথার ত্বকে মাসাজ করে নিন। আপনি চাইলে দুধ-মধু ও কাঁচা হলুদ বাটা ভালোভাবে পেস্ট করে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
  • চুলের খুশকি দূর করতেঃ হলুদ আছে জীবাণুনাসুক ও পরিষ্কারক গুনাগুন। আর তাই খুশকি মোকাবেলায় এটি দারুন কার্যকারী। খুশকি থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে সমপরিমাণ অলিভওয়েল মিশিয়ে নিন। তারপরে তা মাথার ত্বকে মেখে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, খুব শীঘ্রই খুশকি কমে যাবে।
  • চুলে লালচে আধা আনেঃ চুলে লালচে রাভা আনতে হলুদের সঙ্গে মেহেদী ও দই মিশিয়ে চুলে মাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
  • চুল ঝলমলে সুন্দর করেঃ ডিমের কুসুমের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিবেন। এই পেস্ট সপ্তাহে অন্তত একদিন মাথার তালুতে লাগান। চুলে ঝলমলে ভাব চলে আসবে।

কাঁচা হলুদের উপকারিতা 

সাধারণত রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহারের কথা আমরা বেশি জানি। পাশাপাশি হলুদ রান্নায় অত্যাবশকীয় উপদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে এর বাইরেও হলুদের আরেকটি পরিচয় হয় ঔষধি হলুদ। সকালে উঠেই খালি পেটে একটু কাঁচা হলুদ আপনাকে নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

রান্নায় হলুদ সাধারণত গুঁড়ো মসলা আকারেই ব্যবহার করা হলেও কাঁচা হলুদও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। আর কাঁচা হলুদের উপকারিতাও মারাত্মক। কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ইত্যাদি নানা গুণ থাকায় হলুদ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়, বিশেষত আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র তৈরিতে কাজে লাগে। আসুন জেনে নেই কাঁচা হলুদ এর উপকারিতা-

হাড়ের ক্ষয় রোধেঃ কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন হাড়ের ক্ষয় ও হাড়ের গঠনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখে ও হাড়কে সুস্থ ও মজবুত রাখে। মেনোপজের সময় মহিলাদের যে হাড়ের ক্ষয় হয়, তা থেকে বাচঁতে কাঁচা হলুদ আমাদের সাহায্য করে। 

হাড় জোড়া লাগাতেঃ প্রাচীনকাল থেকেই কাঁচা হলুদকে হাড়ের নানারকম রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। হাত বা পা মচকে গেলে চুন-হলুদ লাগানোর কথা তো আমরা সবাইই জানি। এছাড়া কাঁচা হলুদ বেটে ভাঙ্গা হাড়ের জায়গায় লাগালে তা উপকার দেয়। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্যথা, প্রদাহকে কমায় এবং হাড়ের টিস্যুগুলিকে রক্ষা করে ও ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে সাহায্য করে।

বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়ঃ হলুদের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য আয়ুর্বেদে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওআর্থারাইটিসের চিকিৎসায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই মসলায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের ক্ষতিকারী ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ধ্বংস করতে কাজ করে। সুতরাং, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ বা জয়েন্টের ব্যথায় প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত। এটি ব্যথা কমিয়ে উপশম দেবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ হলুদ ও হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যান্টি-ডায়াবেটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচা হলুদ ইনসুলিন হরমোনের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখে।

ক্যান্সার দূর করতেঃ কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যান্সার দূর করতে সহায়তা করে। কারকিউমিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে তাদের মৃত্যু ঘটায়। ফলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে প্রায় ৫৬ রকম ক্যান্সারের সম্ভাবনা কাঁচা হলুদ রোজ নিয়মিত খেলে কমে। সম্ভাব্যভাবে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে এবং টিউমারকে সঙ্কুচিত করতে পারে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য, এটি কেমোথেরাপির প্রভাবের পরিপূরক।

ট্রমাটিক ডিসঅর্ডার কমাতেঃ ট্রমাটিক ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে যেসমস্ত খারাপ, ভীতিজনক স্মৃতি থাকে, হলুদে থাকা কারকিউমিন তা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ স্ট্রেস বা চাপ, উদ্বেগ থেকে আমাদের মুক্তি দেয়।

ত্বকের বয়স কমাতেঃ কাঁচা হলুদ বহু প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের ঔজ্জ্বল্য রক্ষা করতে ও ত্বকের বয়স কমায়। তাই বিভিন্ন ক্রিমের প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়। ত্বকের বিভিন্ন দাগ, রিঙ্কল ও সান ট্যান থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য কাঁচা হলুদের পেস্ট ঘরেই তৈরি করে মুখে লাগানো যেতে পারে। হলুদে থাকা কারকিউমিনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ ত্বককে বয়সের ছাপ থেকে বাঁচায়।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়ঃ নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া আমাদের স্ট্রোকের সম্ভাবনাকে এক ধাক্কায় অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ স্ট্রোকের পরবর্তী চিকিৎসাতেও অনেক উপকার দেয়। কাঁচা হলুদ হার্টকেও বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া অপারেশনের পরে যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে, তাকেও কাঁচা হলুদ কমাতে সাহায্য করে।

দাঁতের ক্ষয় রোধ করেঃ কাঁচা হলুদ দাঁতের ওপরে থাকা এনামেলের আস্তরণকে রক্ষা করে ও দাঁতের ক্ষয় থেকে দাঁতকে বাঁচায়। হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী থাকায় তা জীবাণুকে থেকেও দাঁতকে রক্ষা করে। তাই অনেকসময় বিভিন্ন টুথপেস্টে হলুদকে আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মাড়ি থেকে রক্ত পড়া কমাতে ও মুখের ভেতরে ক্ষত সারাতে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খাওয়া যেতে পারে।

ওজন কমায়ঃ কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ওবেসিটি প্রপার্টি থাকায় নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেলে তা শরীরে মেদ জমতে বাধা দেয় ও মেটাবলিজমের হার বাড়ায়।

হাঁপানিতেঃ হলুদে থাকা কারকিউমিন শ্বাসনালীর পথে থাকা বাধাকে দূর করে ও শ্বাস নেবার ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে হাঁপানি থাকলে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেয়ে দেখুন, সহজে উপকার পাবেন।

অ্যালজাইমার দূর করেঃ অ্যালজাইমার সারা পৃথিবীতেই এখন মারাত্মক রোগের আকার ধারণ করেছে। হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যালজাইমারের চিকিৎসায় সাহায্য করে। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ, স্মৃতিকে রক্ষা করার ক্ষমতা অ্যালজাইমারের চিকিৎসায় কাজে লাগে। দেখা গেছে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেলে তা এই রোগের সম্ভাবনাকে অনেকটাই কমায়।

অ্যানিমিয়া কমাতেঃ কাঁচা হলুদের মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ থাকায় তা অ্যানিমিয়ার হাত থেকে আমাদের বাঁচায়। মেয়েদের সাধারণত অ্যানিমিয়া হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তাই তাদের পক্ষে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খাওয়া খুবই উপকারী। এছাড়া হলুদে থাকা কারকিউমিন লোহিত রক্তকণিকাকে রক্ষা করে। হলুদে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় তা রক্তে আয়রনের ঘাটতিকেও মেটাতে সাহায্য করে।

মূত্রনালীর প্রদাহেঃ বিভিন্ন রিসার্চ থেকে জানা গেছে হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে আমাদের বাঁচায়। তাছাড়া কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-বায়োটিক ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ মূত্রনালীকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে।

ক্ষত সারাতেঃ কাঁচা হলুদ অ্যান্টি-বায়োটিক ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ বিভিন্ন ক্ষত তাড়াতাড়ি সারাতে সহায়তা করে ও ক্ষতের জায়গায় নতুন চামড়া জন্মাতে সাহায্য করে। অপারেশনের পরে ব্যথা কমাতে ও পোড়ার ক্ষত কমাতে কাঁচা হলুদ সাহায্য করে।

তামাক জাত ক্ষতি থেকে বাঁচতেঃ ধূমপানের ফলে তামাক ও নিকোটিন আমাদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন ফুসফুসকে খানিকটা হলেও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় ও ফুসফুসের প্রদাহ হ্রাস করে।

রক্তচাপ কমাতেঃ কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন আমাদের রক্তনালীকে উন্মুক্ত করে ও রক্ত চলাচলে বাধাকে দূর করে। ফলে রক্তচাপ কমায়। 

অ্যালার্জি রোধ করেঃ কাঁচা হলুদ অ্যান্টি-অ্যালার্জিক হিসেবে কাজ করে। ফলে ত্বক ও খাবারের থেকে অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে কাঁচা হলুদ সাহায্য করতে পারে।

চুলের জন্যঃ কাঁচা হলুদ খুশকির সমস্যা, চুল পড়ার সমস্যা, ইত্যাদির থেকেও আমাদের মুক্তি দেয়।

লিভারের জন্য ভালোঃ হলুদ অত্যাবশ্যকীয় এনজাইমগুলির উৎপাদন বাড়ায় যা লিভারে রক্তকে বিষাক্ত প্রক্রিয়াকরণ এবং হ্রাস করতে সাহায্য করে। এইভাবে, হলুদ রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক।

এই উপাদান গুলো ছাড়াও কাঁচা হলুদের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। কাঁচা হলুদ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এইজন্য আমরা কাঁচা হলুদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবো, এবং শরীর থেকে রোগকে বিদায় জানাবো। সকলেই কাঁচা হলুদ খাওয়ার চেষ্টা করব।

কাঁচা হলুদের অপকারিতা 

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, হলুদের এত পুষ্টিগুণ উপাদান, তাহলে এর উপকারিতা কি। এটা বেশি খেলে কি ধরনের অপকারিতা হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া কিন্তু ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত হলুদ মোটেই শরীরের জন্য ভালো নয়। এর নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

শরীর থেকে আয়রণ শোষণ করে নেয় অতিরিক্ত হলুদ। তখন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। ফলে আয়রনের ঘাটতি তৈরি হয় শরীরে। হলুদের মধ্যে থাকা কিউকারমিন ভেঙে ফেরিক কিউকারমিন তৈরি হয়। যার জন্যেই অতিরিক্ত আয়রন শরীর থেকে শুষে নেয়।

এই যৌগটি দেহে আয়রন ভারসাম্যের জন্য দায়ী পেপটাইডস, হেপসিডিন সংশ্লেষণকেও বাধা দিতে পারে। এই সমস্ত কারণগুলো একসাথে আয়রনের ঘাটতি বাড়ে। শুধুমাত্র শরীরে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে এমন নয় সেই সঙ্গে হজমেরও কিন্তু সমস্যা হতে পারে। খুব বেশি হলুদ খেলে ত্বকের সমস্যা, মাথা ধরা এসব লেগেই থাকে। এছাড়াও লিভার বড় হয়ে যাওয়া, আলসার, প্রদাহ এসবও হতে পারে। 

  • দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে ডায়েরিয়া, পেটের নানা সমস্যা, বমি বমি ভাব বা অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে এটি মেন্সট্রুয়াল ফ্লো বাড়িয়ে দেয়। কারণ, হলুদ ইউটেরাইন স্টিমুল্যান্ট হিসাবে কাজ। তাই গর্ভবতী বা নতুন মায়েদের হলুদ কম খাওয়াই ভাল।
  • দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে রক্ত সহজে জমাট বাঁধতে পারে না।
  • যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে তাঁদের ব্লাড সুগারের মাত্রা আচমকাই কমে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খাওয়ার অভ্যাস অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধের কার্যকারীতা কমিয়ে দিতে পারে।
  • দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। অনেক সময় হলুদ অক্সালেটরের স্বাভাবিক বিপাক বিঘ্নিত করে দেয়। এর ফলে ওই অক্সালেট কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।

হলুদের মধ্যে যে কিউকারমিন থাকে তা কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো। স্বাস্থ্যের দিক থেকেও উপকারী। কিন্তু বেশি হলুদ খেলে কিংবা হলুদের সাপ্লিমেন্ট খেলে শুধুই যে অ্যানিমিয়া হবে তা নয়। এর সঙ্গে রক্তপাতে সমস্যা, কিডনি স্টোন, ডায়াবেটিস এসবও কিন্তু আসতে পারে।

ব্রণ দূর করতে কাঁচা হলুদ 

ব্রণের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে নানা প্রচেষ্টা হার মানে অনেক সময়। এই সমস্যা মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। ব্রণ হলে তা যে কেবল অস্বস্তিকর তাই নয়, এটি মুখের সৌন্দর্যও নষ্ট করে। তাইতো ব্রণ ঢাকতে মেকআপের আস্তরণ আরও পুরু করে ফেলে অনেক মেয়ে। এতে সমস্যা কমে না, বরং বেড়ে যেতে পারে। 

হলুদে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদের সঙ্গে চন্দন গুঁড়ো, লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছু ক্ষণ পর্যন্ত রেখে দিন। ২০ মিনিট পরে হালকা গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। ব্রণর সমস্যা দূর হবে। 

  • নিম পাতা ও হলুদ গুঁড়ার প্যাকঃ নিম পাতা বাটার সঙ্গে সামান্য হলুদ গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। এতে ব্রণ সমস্যার সমাধান হবে এবং ত্বক হবে দাগহীন।
  • টমেটো ও হলুদ গুঁড়ার প্যাকঃ টমেটো পেস্টের সঙ্গে হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। এই প্যাকটি ত্বকের ময়লা দূর করার পাশাপাশি ব্রণও দূর করে এবং এটি প্রাকৃতিক ব্লিচের কাজ করে। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • টকদই ও হলুদ গুঁড়ার প্যাকঃ এক চা চামচ টকদইয়ের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। এটি ত্বকের কালচে ভাব দূর করে এবং ব্রণের ক্ষতিকর ছত্রাক দূর করে।
  • দুধ ও হলুদ গুঁড়ার প্যাকঃ প্রতিদিন এক চা চামচ দুধের সঙ্গে সামান্য হলুদ গুড়া মিশিয়ে মুখে লাগান। এই প্যাকটি ব্রণ দূর করে খুব সহজেই এবং এতে ত্বকের ক্লান্তিভাব দূর হবে এবং ত্বক আরো উজ্জ্বল হবে।
  • চন্দন গুঁড়া ও হলুদ গুঁড়ার প্যাকঃ চন্দন গুড়া ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। এক চামচ চন্দন বাটার সঙ্গে এক চামচ গোলাপজল ও সামান্য হলুদ গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এবার প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক হবে আরো মসৃণ, নরম ও দাগহীন।
  • গোলাপজল ও হলুদ গুঁড়ার প্যাকঃ এক চা চামচ গোলাপজলের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। এতে ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর হবে এবং ব্রণ সমস্যার সমাধানে এটি বেশ কার্যকর।

মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা  

আমরা জানি আমাদের সকলের ত্বকের আদ্রতা এক রকম হয় না। কারো ত্বক হয় শুষ্ক আবার কারও ত্বক হয় তৈলাক্ত। বিভিন্ন ত্বকের জন্য আমরা হলুদ বিভিন্ন রকম ভাবে ব্যবহার করে থাকি বা ব্যাবহার করতে হয়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হলুদের সঙ্গে কাঁচা দুধ, বেসন/আটা/ময়দা, মধু, লেবু ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক শুষ্ক হলে অবশ্যই মধুর বদলে টক দই ব্যবহার করুন।

  • হলুদ এবং ময়দার ফেসপ্যাক মুখের দাগ দূর করতে, ত্বককে দাগ হীন করতে সাহায্য করে।
  • হলুদ ত্বকের প্রদাহের সমস্যা দূর করতে অনেক উপকারী।
  • গ্রীষ্মে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে এটি সহায়ক। 
  • এটি ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে অত্যন্ত কার্যকারী।
  • ফাইন লাইন এবং বলিরেখার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
  • মুখের ব্রণ দূর করতে অধিক সহায়তা করে।

সবশেষে বলা যায় যে, হলুদ একটি অত্যন্ত উপকারী উপাদান। এটি শুধু ত্বকের জন্যই না শরীরের প্রতিটি অঙ্গের জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত হলুদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং আপনার ত্বককে যদি উজ্জ্বল এবং মলিন করতে চান, তাহলে ত্বকে হলুদ ব্যবহার করুন। আর আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনি সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url