পেটের গ্যাস কমানোর উপায় - গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
আপনি কি পেটের গ্যাস কমানোর উপায় বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য- গ্যাস বা এসিডিটি নিয়ে এমন লোক খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। খোঁজ নিয়ে দেখলে দেখা যাবে ওষুধের দোকানে সব থেকে বেশি বিক্রি হয় গ্যাসের ওষুধ। আপনি যদি পেটের গ্যাস কমানোর উপায় বিস্তারিত জানেন তাহলে, এই মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা থেকে ওষুধ না খেয়ে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি পেতে পারেন।
গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়, কোন কোন সবজি খেলে গ্যাস হয় না, কোন কোন ফল খেলে গ্যাস হয়, পেটের গ্যাস বের করার ব্যায়াম, পেটের গ্যাস কমানোর ঔষধ, গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না এ সকল বিষয় নিয়ে আজকে আমাদের এই আলোচনা। আপনি যদি কিছু ছোট ছোট নিয়ম কানুন মেনে চলেন। খাবারের তালিকায় কিছু খাবার যোগ করেন, আর কিছু খাবার বাদ দেন। তাহলে আপনি এই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন।
গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়- গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি হলো পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং অবশেষে ক্ষতের সৃষ্টি করা। গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি নাই এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। ফাস্ট-ফুড ব্যস্ত জীবনযাত্রার যুগে গ্যাস অম্বল প্রায় ঘরোয়া রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু ভাজাপোড়া বা মসলাযুক্ত খাবার খেলেই শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিকের অস্থিরকর সমস্যা। একমাত্র ভুক্তভোগী বুঝে যে কি পরিমান যন্ত্রণা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখলে, দেখা যাবে সারাদেশে যে পরিমাণ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয় অন্য কোন রোগের এত ওষুধ বিক্রি হয় না। কিন্তু আমরা যদি ওষুধের উপর নির্ভর না হয়ে, একটু খাবারের দিকে খেয়াল রাখি, একটু নিয়ম মেনে চলি তাহলে গ্যাস্টিক আর আমাদেরকে আক্রমণ করতে পারবে না।
চলুন তাহলে জেনে নেই ওষুধ ছাড়া, গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে কিভাবে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়-- শসাঃ শসাতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও এন্টি ইনফ্লেমেটরি যা পেটের গ্যাস কমায় এবং পেটকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
- দইঃ দই আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ব্যাকটেরিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতিদিন একটু করে দই খেলে পেটের ব্যাকটেরিয়া দূর হবে।
- পেঁপেঃ পেঁপেতে পাপায়া নামের এনজাইম থাকে যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
- কলা ও কমলাঃ কলা ও কমলা পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। ফলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পেট পরিষ্কার রাখতে কলা খুবই উপযোগী।
- অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরার মধ্যে নানা ধরনের খনিজ উপাদান থাকায় এটি যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি খাবার হজম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ডাবের পানিঃ ডাবের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়াও নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রতিনিয়ত ডাবের পানি খান। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন।
- আদাঃ আদার সব চাইতে কার্যকারী আন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যুক্ত খাবার। পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।
- জিরাঃ জিরা পেটের গ্যাস দূর করতে খুবই উপকারী। আখের গুড়ের সঙ্গে জিরা মিশিয়ে বাড়িতেই ট্যাবলেট তৈরি করুন। এগুলো দিনে তিনবার করে খেলে গ্যাসের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
- পানিঃ প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একদম খালি পেটে পুরো পেট ভর্তি করে পানি পান করুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ পান করলেই উত্তম পর পাবেন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশি কঠিন কাজ নয়, শুধু একটু খাওয়া দাওয়া ওপর নজর রাখতে হবে আর একটু নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর উপরে উল্লেখিত খাবার গুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলু্ন তাহলে গ্যাসের সমস্যা অনায়াসে দূর হয়ে যাবে। ঔষুধের আর কোন প্রয়োজন পড়বে না।
কোন কোন সবজি খেলে গ্যাস হয় না
- তরমুজঃ তরমুজে ৯২ শতাংশ পানি থাকে, গরমের সময় শরীর থেকে পানি ঝরে যায় বলে এ সময় তরমুজ খাওয়া ভালো। এতে যে পটাশিয়াম থাকে তা গ্যাস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
- পালংঃ পালং শাকে রয়েছে অদ্রবণীয় আঁশ যা পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং গ্যাস দূর করে। ঠিকমতো রান্না করে খেলে গ্যাসের আশঙ্কা কমে যায়।
- আনারসঃ আনারসে রয়েছে ৮৫% পানি এবং ব্রোমেলাইন নামের কার্যকর পচক রস। এটি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। আবার আনারস ত্বকের জন্যও অনেক উপকারী।
- মৌরিঃ মৌরিতে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-সি, আয়রন, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এর মত খনিজ উপাদান। মৌরির-চা হজম প্রক্রিয়ার জন্য অনেক উপকারী। গ্যাস্ট্রিক এনজাইম তৈরিতে মৌরি অনেক কার্যকরী। আবার মৌরির তেল, পেটের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে।
- শসাঃ শসায় প্রচুর সিলিকা ও ভিটামিন-সি আছে । এতে উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্নমাত্রায় ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে। ফলে যারা দেহের ওজন কমাতে চান তাদের জন্য শসা টনিক হিসেবে কাজ করে।কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে তা হজমের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- কলাঃ যারা বেশি করে লবণ খায় তাদের গ্যাস ও হজমের সমস্যা হতে পারে। কলায় যে পটাশিয়াম থাকে তাতে শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর ভারসাম্য ঠিক থাকে। কলা দেহ থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে এবং হজমের কাজে সাহায্য করে। এজন্য নিয়মিত দুটি করে কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
কোন কোন ফল খেলে গ্যাস হয়
তেল যুক্ত খাবার, অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন ও ধূমপাদ সহ নানা কারণে গ্যাস্ট্রিক প্রায় ঘরোয়া রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে নিয়ম মেনে চললে গ্যাস্টিকের মতো সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে সব ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না, খাবারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
- লিচুঃ খালি পেটে বা ভরা পেটে অতিরিক্ত লিচু খাওয়া ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লিচু খেলে হজম ও গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই কোনভাবেই অতিরিক্ত লিচু খাওয়া যাওয়া যাবে না।
- আপেলঃ আপেলে রয়েছে ফাইবার এবং ফ্রূকটোজ যা সহজে হজম হতে চায় না। এজন্য যাদের একটু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তারা একটু কম পরিমাণে আপেল খাবেন।
- পেয়ারাঃ পেয়ারা তে রয়েছে গ্লুকোজ ও সরবিটল নামক সুগার উপাদান যা সহজে হজম হয় না। এজন্য যাদের পেটে সমস্যা আছে তারা একটু কম পরিমাণে পেয়ারা খাবেন।
পেটের গ্যাস বের করার ব্যায়াম
- হাটাঃ খাওয়ার পরে শরীর খাদ্যকে ভেঙ্গে যেখানে প্রয়োজন সেখানে পুষ্টি পাঠাতে শুরু করে। ডাক্তার ডিলগার্ডো বলেন, "হাটা এই প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত এবং সহজ করে তোলে"। আপনি যদি প্রতিনিয়ত পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন তাহলে খাওয়ার পর অন্ততপক্ষে পাঁচ মিনিট হাঁটুন। বিশেষ করে রাতে খাবার পরে।
- পেটের ম্যাসেজঃ ঘড়ির কাটার দিকে আস্তে আস্তে পেট মেসেজ করা আপনার অন্ত্রের মাধ্যমে গ্যাসের চলাচল উদ্দীপিত করতে সাহায্য করবে এবং পায়ুপথ দিয়ে বের হয়ে যাবে।
- কোর এক্সেসাইজঃ আপনার মূল পেশিকে শক্তিশালী করা যেমন প্লাঙ্ক এর মাধ্যমে হজম শক্তি বাড়াতে এবং গ্যাসের সমস্যা কমাতে এটি খুবই কার্যকারী ব্যায়াম।
- যোগব্যায়াম ভঙ্গিঃ কিছু যোগ ব্যায়ামভঙ্গি যেমন উপবিষ্ট মোচড় এবং বায়ু উপশমকারী ভঙ্গি, গ্যাস এবং পেট ফাঁকা উপশম করতে সাহায্য করতে করে থাকে।
পেটের গ্যাস কমানোর ঔষধ
গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত একটি ওষুধ হচ্ছে রেনিটিডিন। রেনিটিডিন সাধারণত পেটে গ্যাসের সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিংবা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। তবে এই ওষুধ যদি দীর্ঘদিন গ্রহণ করা হয়, তবে ক্যান্সার হতে পারে। তবে রেনিটিডিন ছাড়াও গ্যাস্ট্রিক নিরাময় করতে আরো অনেকগুলো ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, চলুন সেগুলোর নাম জেনে নেই।
- সেকলো
- ইসুটিম ২০
- ওপি ২০
- এক্সিলক ২০
- নিউ ট্রাক
- ওর ট্রাক
- সার্জেল
- ম্যাক্সপ্রো
- লোসেকটিল
- ফিনিক্স ২০
- রাবিপ্রাজল
- এন্ট্রাসিড
- ইসোমিপ্রাজল বিপি
উপরের ওষুধগুলো সবগুলো গ্যাস্ট্রিকের, প্রায় সবগুলো একই কাজ করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এর কোনটিই সেবন করা উচিত নয়।
গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না
কিছু সবজি আছে সেগুলো, গ্যাস্টিকের সমস্যা যাদের আছে তাদের খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। কখনো যদি বুঝতে পারেন আপনার হজমের সমস্যা আছে, তাহলে ওই সবজি ভুলেও খাবেন না।
- ছোলাঃ সকালে অনেকে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে যে প্রোটিন থাকে তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য যারা হজমের সমস্যা বা গ্যাসটিকে ভুগছেন তাদের খুব বেশি ছোলা না খাওয়াই উচিত।
- কচুঃ যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের এই সবজি না খাওয়াই ভালো। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
- মুলাঃ শীত মৌসুমের এই সবজি গ্যাস্ট্রিক রোগীদের জন্য খুবই ভয়ানক। এটি গ্যাসের সমস্যা অনেক বাড়িয়ে দেয়। পেট ফুলে যাওয়া সমস্যা দেখা দেয় মুলা খেলে।
- পাতাকপি ও বাঁধাকপিঃ এ ধরনের সবজিতে রয়েছে রফিনোজ নামক এক ধরনের সুগার উপাদান যা পাকস্থলীর ব্যাকটেরিয়া ফারমেন্ট বা সৃষ্টি করে। যা পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আপনি যদি ওপরের নির্দেশনা বলিতে দেওয়া খাবার গুলো প্রতিনিয়ত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন এবং নির্দেশনা গুলি মেনে চলেন, তাহলে আপনি পুরোপুরি ভাবে গ্যাস্ট্রিক এর মত ভয়াবহ অসুখ থেকে বা সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url