টিউমার কোথায় কোথায় হয় - টিউমার চেনার উপায়

টিউমার হল শরীরের অস্বাভাবিক টিস্যু পিণ্ড, যার কোষ বৃদ্ধি হয় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দ্রুত।এখন অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে টিউমার কোথায় কোথায় হয়, কিংবা টিউমার চেনার উপায় কি। কোষের ধরন ও আচরণ অনুসারে টিউমার দুই ধরনের হয়। তাহলে টিউমার চেনার উপায় কি। 

টিউমার কোথায় কোথায় হয় - টিউমার চেনার উপায়

আজকের এই পোস্টে আমরা টিউমার কোথায় কোথায় হয়, টিউমার চেনার উপায়, টিউমার কেন হয় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে এর সব কিছু বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। সেই সাথে আপনি আরো জানতে পারবেন টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয়। সবকিছু জানতে পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন। 

টিউমার কি

টিউমার ইংরেজি শব্দ। বাংলা অর্থ হলো আব্র্বুদ। টিউমার বলতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি বিশেষ নিদান তাত্তি্বক অবস্থা কে বোঝানো হয়েছে। শরীরের যে কোন স্থানে কোষ সমূহ যদি ধীরে ধীরে বা দ্রুততার সঙ্গে অস্বাভাবিক ও অসংঞ্জস্য ভাবে ফুলে ওঠে এবং এক কথায় টিউমার হলো মূল দেহ কোষের রূপান্তর বা নতুন কোষের সংযোজন।

কি কারনে মানব দেহে এমন টিউমার বা ক্যান্সার হয় তার কোন কারণ এখনো জানা যায়নি। আমাদের দেশে বেশ কিছু পরিচিত টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। টিউমার মূলত তিন প্রকার হয়। তিন প্রকার টিউমার হল-

  • হাইটোমা
  • হিস্টোমা বা কানেক্টিভ টিস্যু টিউমার
  • টেরাটোমা বা মিক্সড সেল টিউমার।
হিস্টোমা টিউমার আবার দুই প্রকার-

বিনাইনঃ এ জাতীয় টিউমার তুলতুলে নরম হয়, শক্ত হয় না। খুব আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। এর উপরের চর্ম আলাদা পৃথক মনে হয়। এর কোন আবরণ থাকে না। এ টিউমারের সংলগ্ন গ্রন্থী সমূহ আক্রান্ত হয় না। চাপ দিলে বা আঘাত করলে এ জাতীয় টিউমারে কোন যন্ত্রণা অনুভব করা যায় না বা হয় না।

ম্যালিগন্যান্টঃ এ জাতীয় টিউমার অনেক শক্ত বা নিরেট হয়। এটা খুব দ্রুত বড় হয়ে যায়। এতে আবরণ থাকে। এটার উপরে চরম আলাদা পৃথক মনে হয় না। এ টিউমার সংলগ্ন বলছি সমূহ আক্রান্ত হয়। চাপ দিলেতে যন্ত্রণা অনুভব হয়। এতে আঘাত করলে অনেক ক্ষতি হয়।

শরীরের বিভিন্ন স্থানে টিউমার বিভিন্ন নামে পরিচিত-

  • চর্মের টিউমারের নাম এপিথেলিওমা।
  • বোনের কার্টিলেজের টিউমারের নাম কনড্রমা।
  • মস্তিষ্ক কোষের টিউমারের নাম গ্লাইওমা।
  • পিঠ, কাঁধ প্রভৃতি স্থানে ফ্যাটিটিস্যু টিউমারের নাম লিপোমা।
  • নাক, জরায়ু প্রভৃতি শৈ্লষ্মিক ঝিলি্লর টিউমারের নাম প্যাপিলোমা।
  • জরায়ু, পাকস্থলী প্রভৃতি স্থানের মাংসপেশির টিউমারের নাম মাইওমা।
  • মাথার খুলি, মুখম-ল, নাসিকা গহ্বর প্রভৃতি স্থানে হাড়ের অস্থি টিউমারের নাম অস্টিওমা।
  • মস্তিষ্ক, লিভার প্রভৃতি স্থানে রক্ত নালিকার টিউমারের নাম হেমান জিওমা।
  • ঘাড়, জিহ্বা, বগল প্রভৃতি স্থানের লসিকা নালির টিউমারের নাম লিমফ্যানজিওমা। সাধারণত কম বয়সে সার্কোমা টিউমার দেখা দেয়। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর কার্সিনোমা টিউমার দেখা দেয়।

টিউমার কেন হয়

টিউমার নানা ধরনের হয়। টিউমার কত প্রকার তা আমরা উপরে জেনে এসেছি। এই টিউমারের মধ্যে একটি মারাত্মক ক্ষতিকর টিউমার রয়েছে যা আমাদের কাছে ব্রেন টিউমার নামে পরিচিত। সাধারণত মস্তিষ্কে যে টিউমার হয় তাকেই বলা হয়। যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে। কিছু টিউমারের সূত্রপাত মস্তিষ্কেই হয়।

মস্তিষ্কের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়াকে ব্রেন টিউমার বলা হয়। যখন মাথায় এই টিউমার বৃদ্ধি পায় তখন মস্তিষ্কের ভেতর চাপ বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সঠিক সময়ে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার প্রয়োজন। তবে এর আগে তো জানা উচিত ব্রেন টিউমার কেন হয় বা এর লক্ষণ গুলো কি।

ব্রেন টিউমার বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ব্রেন টিউমার তখনই বেশি হয় যখন মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কোষগুলির ডিএনএতে কোন ত্রুটি থাকে। শরীরের কোষগুলো ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে যায় এবং মরে যায়। যার পরিবর্তে অন্য কোষ সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়ে যায় তবে দেখা যায় পুরনো কোষগুলো সম্পন্ন ভাবে বিনষ্ট হয় না। 

যার ফলে এই কোষগুলো জমাট বেঁধে টিউমার ওভার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেক সময় বংশগত কারণে ব্রেন টিউমার হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন রকমের টিউমার হয়ে থাকে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-

জেনেটিকসঃ জিনগত কারণে অনেক ক্ষেত্রে টিউমার সৃষ্টি হয়। টিপি ৫৩ নামক জিনের অস্বাভাবিক মিউটেশনের কারণে টিউমার কোষ তৈরি হয়।

জীবন-যাপনঃ ধূমপান করা মদ পান করা মাংস বেশি খাওয়া অতিরিক্ত ওজন হওয়া কম শারীরিক পরিশ্রম করা ইত্যাদি কারণে মানব শরীরে টিউমারের উৎপন্ন হয়।

পারিবারিক কারণেঃ পরিবারের কাছের কোন আত্মীয়দের কোন টিউমার থাকলে বংশধারায় সেই টিউমার হতে পারে।

লিঙ্গঃ মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের নিজেদের শরীরে অনেক বেশি ঝুঁকি থাকে টিউমার তৈরি হবার। শুধুমাত্র তাদের অস্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য।

কসমেটিক্স পণ্যঃ শরীরে বেশি পরিমাণে পা দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন কেমিক্যাল যার কসমেটিক্স অন্য যেমন পারফিউম পাউডার ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার শরীরে টিউমার উৎপন্ন করার জন্য দায়ী হতে পারে।

ইনফেকশনঃ কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকেও দেহে টিউমার তৈরি সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। যেমন হেপাটাইসিস বি, এইচ পি ভি ইত্যাদি। এই ভাইরাসটি জরায়ু এবং অস্থির ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

প্রজনন ও হরমোনাল কারণেঃ বেশি বয়স পর্যন্ত সন্তান না নেওয়া, অনেক বেশি সময় পর্যন্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট গ্রহণ করা। বিভিন্ন হরমোনাল থেরাপি দেওয়াসহ ইত্যাদি ব্যাপার আমাদের শরীরের টিউমারের উৎপন্নের জন্য দায়ী হতে পারে। মূলত নারীদের স্তন টিউমারের অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি।

টিউমার কি ব্যথা হয়

টিউমার দু’ধরনের হয়। এক ধরনের টিউমার শুধু এক জায়গাতে বৃদ্ধি পেয়ে এক জায়গাতেই বসে থাকে। এদের বলে বিনাইন টিউমার। এরা তেমন ক্ষতিকারক নয়। আরেক প্রকার টিউমারের ভেতর থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্ত কিংবা লিম্ফ্ নামক কিছু রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে শরীরের অন্য কোনো অংশে গিয়ে জমা হয়ে সেই অংশের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।

নতুন কোনো টিউমার তৈরি করে সেখানে, তখন তাদের বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। এ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকে অন্যভাবে বলে ক্যান্সারাস টিউমার। কাজের সুবিধায় সংক্ষেপে ক্যান্সার বলে। টিউমার কেন হয় সে সম্পর্কে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

আপনারা তো জানেনই টিউমার দুই ধরনের হয়। তাদের মধ্যে এক ধরনের টিউমার অনেক ক্ষতিকারক এবং এটি ব্যাথাদায়ক। কোনভাবে আঘাত লাগলে বা একটু গরমিল হলেই যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যেতে হয়। আর অন্য টিউমারটি এটি তুলনায় অনেকটা কম ব্যথা থাকে এবং কম যন্ত্রণাদায়ক।

আমাদের সকলের নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন অনিয়মের ফলে আমাদের শরীরে টিউমার জমাতের না পারে। আর টিউমারের কোন উপসর্গ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। টিউমার কিন্তু এটি মরণব্যাধি রোগ। সেজন্য বসে থাকা যাবে না।

টিউমার চেনার উপায়

শরীরের স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দ্রুত অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কোন কোষ বৃদ্ধি পেলে টিউমারটি সৃষ্টি হয়।প্রতিদিন আমাদের শরীরে অসংখ্য কোষ মরে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং সেখানে নতুন কোষ তৈরি হয়। এই কোর্সগুলি মারা গেলে এবং নতুন কোষ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির ভারসাম্য নষ্ট হলে টিউমার তৈরি হয়।

অনেক সময় শরীরে ব্যাথাহীন কিছু মাংসপিণ্ড দেখা যায় যা থেকে পরবর্তীতে সৃষ্টি হতে পারে টিউমার।চলুন জেনে নেই টিউমার চেনার উপায় সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য-

টিউমার মূলত দুই ধরনের হয়। এক ধরনের টিউমার শুধু এক জায়গাতে বৃদ্ধি পেয়ে এক টাকা দিয়ে অবস্থান করে। এদেরকে বলে বিনাইন টিউমার। এটা তেমন ক্ষতিকারক নয়। আরেক প্রকার টিউমার শরীরের ভেতর থেকে অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্য কোন অংশে গিয়ে জমা হয়ে সেই অংশের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।

আর এটি নতুন টিউমার তৈরি করে। এদের বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার টিউমার। যাকে সংক্ষেপে ক্যান্সার বলে। টিউমার গুলোকে ভালোভাবে চিনে রাখতে হবে।

পেটে টিউমার চেনার উপায়ঃ বর্তমানে পেটের ব্যথায় কমবেশি আমরা সকলেই ভুগী। বিভিন্ন কারণে পেটে ব্যথা হয়। তবে সব ব্যথা মারাত্মক নয়। পেটে টিউমার হলে পেট ব্যথার সঙ্গে পেটে চাকা জাতীয় পদার্থের অনুভূতি হতে পারে। মনে হবে পেটের কোথাও যেন চাপা বা শক্ত কোন পদার্থ তৈরি হয়েছে।এসব চাকা স্থির থাকতে বা নড়াচড়া করতে পারে। পেটে টিউমার হলে মলের সঙ্গে রক্ত, কালো মল, প্রস্রাবে রক্ত, বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিবে।

গলার টিউমার চেনার উপায়ঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গলার পেছনের নরম হাড়ে এক ধরনের টিউমার হয়ে থাকে। আপনি যদি সব সময় গলায় কিছু একটা আটকে আছে অনুভব করেন, তাহলে এটি টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। যে টিউমার আপনার গলার কোনো অংশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। হঠাৎ করে গলার স্বর পরিবর্তন, ওজন কমে যাওয়া, মুখ এবং গলা ফুলে যাওয়া, গলা খসখস করা, গলার সঙ্গে কানেও ব্যথা করা হতে পারে গলায় ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ।

জরায়ু টিউমার চেনার উপায়ঃ জরায়ুতে সৃষ্ট টিউমারের অপর নাম হলো ইউটেরিন ফাইব্রয়েড। জরায়ু টিউমার বা ফাইব্রয়েড টিউমার চেনার কেমন কোন উপায় নেই। রোগী নিজে বুঝতে পারেন না তিনি ফাইব্রয়েড সমস্যায় ভুগছেন। শুধু বিবাহিত মহিলা না অবিবাহিত মহিলারাও আক্রান্ত হতে পারেন জরায়ু টিউমারে। 

তেমন কোন লক্ষণ না বুঝতে না পারলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাসিকের পরিমাণ বেশি হয়, মাসিকে ব্যথা হয়, তলপেটে চাকা অনুভূত হয়। এছাড়াও তলপেটে ব্যাথা, মুত্রথলী অন্ত্রে চাপ,সহবাসকালীন সময়ে ব্যথা হতে পারে। এগুলো লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মাথায় টিউমার চিনার উপাইঃ সাধারণত মাথার টিউমারকেই ব্রেন টিউমার বলে। যে কোন বয়সে ব্রেন টিউমার হতে পারে। মাথায় যে কোন টিউমারের প্রধান লক্ষণ হল মাথাব্যথা। মাথাব্যথা রোগীর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কমতে অথবা বাড়তে থাকে। অর্থাৎ রোগী যদি কোন কাজ না করে সব সময় বিশ্রামে থাকে মাথা ব্যাথা সেক্ষেত্রে কম হয়, আর রোগী যদি কোন কাজ করে তাহলে তার মাথা ব্যথা বেড়ে যায়।এই সমস্যাটা রাতে এবং ভরে বেশি হয়।

ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়ঃ স্তনের কিছুকোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে কিংবা অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে স্তনে টিউমার বা পিণ্ডে দিয়ে পরিণত হয়। অধিকাংশ সময়ে স্তন তিউমার প্রথমে এক বা একাধিক ছোট চাকা আকার দেখা দেয়। অনেক স্তনের বোঁটাই ঘা, ক্ষত বা বোঁটার চারপাশে কালো অংশে চুলকানির লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও কারো স্তনের বোঁটা দিয়ে দুধের মত সাদা রস বের হতে থাকে। স্তন লাল রং হয়ে গেছে এমনও হতে পারে।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার চেনার উপায়ঃ পিণ্ড যা অস্বাভাবিক কোষ দ্বারা যে টিউমার গঠিত হয়, তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে। এই কোষগুলি একটি অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে বৃদ্ধি পায় এবং বিভক্ত হয় এবং তারা কাছাকাছি টিস্যুতে আক্রমণ করতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এগুলো হওয়ার প্রথমে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে আপনার টিউমার হয়েছে। এই টিউমার বেদনা দায়ক হওয়ার আগেই বড় আকার ধারণ করে। এই টিউমার হাত এবং পায়ে ব্যথাহীন এবং গলদ বোধ হয়ে জন্মায়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের কিছু লক্ষণ রয়েছে, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস এবং ব্যথা। এছাড়াও এই টিউমার আপনার চেহারা নষ্ট করে দেয়।

আপনি যদি এ সকল সমস্যা আপনার মধ্যে দেখতে পান, তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন, না হলে অনেক বড় সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবেন। টিউমার একটি মরণব্যাধি রোগ। এটি নিয়ে বসে থাকবেন না। 

টিউমার কোথায় কোথায় হয়

টিউমার কথাটি সঙ্গে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, যে টিউমার কোথায় কোথায় হয়। টিউমার কোথায় কোথায় হয়, কিভাবে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।সঠিকভাবে বলতে গেলে টিউমার হওয়ার কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই, শরীরের যে কোন অংশ বা জায়গাতেই টিউমার হতে পারে এবং এটি হতেও দেখা যায়। 

টিউমার শরীরের যেকোনো জায়গায় হলেও বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে টিউমার হলে সেখান থেকে জটিল রোগ হয়ে যায়। যেমন ব্রেন টিউমার, স্তন টিউমার, জরায়ু টিউমার, পিত্তথলি টিউমার, মেরুদন্ডে টিউমার, চোয়ালে টিউমার, লিভার টিউমার, পেটে টিউমার ইত্যাদি। তবে কিছু কিছু টিউমার আমরা হাত দিয়ে অনুভব করতে পারি আর যে টিউমার শরীরের অভ্যন্তরে থাকে সেগুলোকে দেখাবা বোঝা যায় না বলে অনেক সময় এর চিকিৎসা নিতেও দেরি হয়ে যায়।

বিশেষ করে যেসব জায়গাতে সব থেকে বেশি টিউমার হয়, সেই জায়গাগুলো হলো-

  • পেটে টিউমার
  • ব্রেন টিউমার
  • স্তন টিউমার
  • জরায়ু টিউমার
  • পিত্তথলি টিউমার
  • লিভার টিউমার
  • মেরুদন্ডে টিউমার

টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয়

টিউমার শব্দটি শুনলে অনেকেই মনে করেন ক্যান্সার, আবার ক্যান্সার শুনলে অনেকে ভাবেন টিউমার। যেমন আমরা বলি, ব্রেন টিউমার হয়েছে কিংবা ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে। আসলে দুটোই কি একই! মোটেও না। টিউমার এবং ক্যান্সার এক না। অর্থাৎ বোঝা যায় যে টিউমার থেকে ক্যান্সার হয় না। 

টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যা বৃদ্ধি করে। টিস্যু মানে একই ধরনের কিছু কোষ, যখন কোথাও এক হয়ে একই ধরনের কাজ করে। আমাদের শরীরে বিলিয়ন নয়, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষ রয়েছে। ধরা হয় একজন প্রাপ্তবয়স্কের দেহে গড়ে ৩০ ট্রিলিয়ন এর মত কোষ রয়েছে।

জন্মের সময় এ সংখ্যা চার শতাংশ এর এক শতাংশ থাকে। কোষের ভেতর কিছু নিয়মে পুরনো কোষ মরে যায়, নতুন কোষ জন্ম নেয়। আবার কিছু কোষ সাইজে বড়, কিছু সংখ্যায় বাড়ে। কিন্তু কোন কোষ মরে যাবে এবং কোন কোষ কতগুলো দিতে পারবে, কোন কোষের সাইজ কেমন হবে, কোষের এমন সব বৈশিষ্ট্য কে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোষের ভেতর কিছু নির্দেশ বা নিয়ম থাকে। আর এই নিয়মগুলি থাকে ডিএনএ তে।

আমাদের শরীরে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যান্সার জাতীয় সমস্যা আছে। ক্যান্সার হলো মূলত শরীরের অনেক জায়গায় বিভিন্ন সমস্যার একটি সমষ্টি। এর শুরুটা শরীরের কোনো একটি অংশে হয়। তারপর যখন সেটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে, কেবল তখন তাকে ক্যান্সার বলে।

টিউমারের মধ্যে থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে গিয়ে কখনো নতুন টিউমার হতে পারে, কখনো কেবল সেখানকার অন্য কোষগুলোর কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এমন করে না ছড়িয়ে পড়া বিনাইন টিউমারগুলো যখন শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়ে গিয়ে সমস্যা তৈরি করে, সেই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোই মূলত বেশিরভাগ ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে, তখন তার তৈরি করা সমস্যাগুলোকে সহজ করে কেবল ক্যান্সার বলে। এ ক্ষেত্রে যে অঙ্গ বা অংশ থেকে কোষের পরিবর্তনের শুরু, তখন তাকে ওই পার্টের ক্যান্সার বলে। 

আবার কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন ব্লাড ক্যান্সার, লিওকেমিয়া। এক্ষেত্রে ডাক্তারের স্বাভাবিক কোষগুলোর চেয়ে অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্তের বেশি থেকে রক্তকে তার স্বাভাবিক কাজ করতে দেয় না রক্তের কোন আলাদা টিউমার দেখা দেয় না। তার মানে সব টিউমার ক্যান্সার নয়, কিছু কিছু টিউমার কেবল ক্যান্সার।

যখন সেই টিউমারগুলোর মধ্যে থাকা কোষগুলো শরীরের অন্য অংশে গিয়ে আরও নতুন টিউমার বা কাজে সমস্যা তৈরি করে। আবার সব ক্যান্সার টিউমার নয়, যেখানে অস্বাভাবিক কোষগুলো টিস্যু আকারে কোথাও জমাট বেঁধে প্রকাশ পায়। অনেক মহিলার ব্রেস্টে জীবনের যে কোনো সময়ে লাম্প বা চাকতির মতো বা পিণ্ডের মতো কিছু দেখা দিতে পারে। এ বাড়তি প্লিটি কেবল একটি টিউমার হতে পারে।

ক্যান্সার আক্রান্ত হলে ক্ষুধামান্দ্য, বমিবমি ভাব, রক্তশূন্যতা, অল্প সময়ে ওজন কমে যাওয়া, দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। শরীরে ফোলা বা টিউমারের আচরণ যদি ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্যের মতো না হয় ও রোগীর যদি ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণের কোনোটাই না থাকলে ওই টিউমার নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

আবার ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেলেও প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা করানো গেলে বেশিরভাগ ক্যান্সার ভালো হয়। তাই শুরুতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, ভালো থাকুন।


সবশেষে বলা যায় যে টিউমার একটি মারাত্মক রোগ। আপনি যদি টিউমারের লক্ষণ বুঝতে পারেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। টিউমারকে কিভাবে চেনা যায় সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি, এবং টিউমার কোথায় হয় সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা করি আপনি সকল বিষয় জানতে পারবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url