নেটওয়ার্ক কি - নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কী কী
বর্তমান বেশি আমরা সকলেই নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আপনি কি জানেন নেটওয়ার্ক কি, নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি। আপনি কি এটা জানেন যে নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা আমাদের সকল কাজের সঙ্গে এগুলোর সাথে জড়িত কিন্তু আমরা এগুলো সম্পর্কে জানি না।
আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব যে নেটওয়ার্ক কি, নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে, নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে, আপনি এই সকল বিষয়ে সঠিক ধারণা অর্জন করতে পারবেন।
নেটওয়ার্ক কি
নেটওয়ার্ক শব্দের অর্থ হলো জাল। যখন একাধিক কম্পিউটার পরস্পরে কোন তার বা বেতার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে তখন সেটাকেই নেটওয়ার্ক বলে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে একটি নেটওয়ার্কে কেবল বা তারহীন সংযোগ দ্বারা কমপক্ষে দুটি কম্পিউটার সিস্টেম এর সংযোগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
সহজ ভাষায় নেটওয়ার্ক হল একটি কেবল দ্বারা সংযুক্ত দুটি কম্পিউটারের সংযোগ। এ জাতীয় নেটওয়ার্ককে কে পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক বলা হয়। এই নেটওয়ার্কে উভয় অংশগ্রহণকারীদের সমান সুযোগ আছে। প্রতিটি কম্পিউটারের অন্য ডিভাইসের ডেটা অ্যাক্সেস থাকে এবং ডিস্ক স্পেস, অ্যাপ্লিকেশন বা পেরিফেরাল ডিভাইস বা প্রিন্টার ইত্যাদি হিসাবে সংস্থানগুলি ভাগ করতে পারে।
একটি নেটওয়ার্ক হলো দুই বা তারও বেশি কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের একটি সমন্বয় যার ডেটা এক্সচেঞ্জ এবং স্থানসমূহের উদ্দেশ্য একে ওপরের সাথে যুক্ত থাকে। মানে ডিভাইস বা নেটওয়ার্ক গুলি ওয়ারলেস সংযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারে। মোট কথা হলো কমপক্ষে দুটি পৃথক উপাদান থাকবে এবং তারা একসঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।
নেটওয়ার্ক কিভাবে তৈরি হয়
এক বা একাধিক কম্পিউটার, যেকোন মাধ্যমে একটির সাথে অপরটির জোড়া লাগানোকে বা কানেকশন তৈরি করাকে নেটওয়ার্ক বলে।
একাধিক কম্পিউটার পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। নেটওয়ার্ক ৫টি মাধ্যমকে কেন্দ্র করে নেটওয়ার্কিং এর কাজ সম্প্রসার করে থাকে। ৫টি উপাদান থেকে যদি কোন একটি ব্যতীত নেটওয়ার্ক স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে কাজ করবে না। নেটওয়ার্ক তৈরির ৫টি উপাদান হলো-
- Message
- Protocol
- Sender
- Receiver
- Transition media
Message- এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে যে ইনফরমেশন পাঠাবেন সেই তথ্য কে মেসেজ বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে যা সেন্ড করবেন তাই মেসেজ অথবা যা রিসিভ করবেন তাই মেসেজ। মেসেজ ব্যতীত অন্য কিছুই সেন্ড এবং রিসিভ করা যায় না। মেসেজের টাইপ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। টেক্সট, ইমেজ, অডিও, ভিডিও, পিডিএফ।
Protocol- এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডাটা ট্রান্সফারের মাধ্যমকে প্রোটোকল বলা হয়। দুইটি ডিভাইসের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রটোকল ব্যবহার করা হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে দুটি ডিভাইসের মধ্যে ডাটা ট্রান্সফার করার জন্য যে সম্পর্ক স্থাপন করা হয় সেটাই প্রটোকল।
Sender- ডাটা প্রদান করার ক্ষেত্রে সেন্ড এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে তথ্য ট্র্যান্সফার করতে নেটওয়ার্ক এর সাথে প্রথমেই যুক্ত হতে হয়। এরপর যে অপশনটি আসে তা হচ্ছে সেন্ড। তাই বলা যায়, Sender হচ্ছে একটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডাটা ট্র্যান্সফার করার মাধ্যম এবং নেটওয়ার্কিং তৈরির উপকরণ।
Receiver- আপনার ডাটা যে মাধ্যম তারা গ্রহণ করি তাকে রিসিভার বলা হয়। কোন ডিভাইস থেকে ডাটা ট্রান্সফার করার পর যে ডিভাইসে ডাটা ট্রান্সফার হবে সেই ডিভাইসের যদি রিসিভার সিস্টেম না থাকে তাহলে ডাটা কোনভাবেই পাওয়া যাবে না। এজন্য রিসিভ আর অবশ্যই হতে হবে।
Transition media- দুটি ডিভাইসের মধ্যে ডাটা স্থানান্তর হওয়ার মাধ্যমকে বলা হয় Transition media. দুটি devise এর মধ্যে ডাটা ট্র্যান্সফার হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি মাধ্যম। সেটা হতে পারে Optical fiber কিংবা wires.
ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে
প্যাকেট রাউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট কাজ করে, যা ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ও ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল (টিসিপি) এর মাধ্যমে সংযুক্ত। টিসিপি ও আইপি একইসাথে এটি নিশ্চিত করে যাতে বিশ্বের যেকোনো কেন্দ্র থেকেই যেকোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়।
ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ডাটা প্যাকেট ও মেসেজ আকারে প্রেরিত হয়। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে পাঠানো ডেটাকে মেসেজ বলা হয়, যা প্রেরণের আগে ছোট ছোট অংশ বা প্যাকেটে পরিণত হয়। এই মেসেজ ও প্যাকেটসমুহ এক সোর্স থেকে অন্য সোর্সে আইপি ও টিসিপি ব্যবহার করে ট্রাভেল করে। আইপি হলো মূলত কিছু সিস্টেম এর কিছু নিয়ম যা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা প্রেরণের সময় তা মনিটর করে।
প্যাকেট রাউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট কাজ করে। যা ইন্টারনেট প্রটোকল ও ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রোটকল এর মাধ্যমে সংযুক্ত। টিসিপি ও আইপি একইসাথে এটি নিশ্চিত করে যাতে বিশ্বের যেকোনো কেন্দ্র থেকেই যেকোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট নির্দ্বিধায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাটা প্যাকেট ও মেসেজ আকারে প্রেরিত হয়।
ইন্টারনেটের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য একে নিজস্ব গ্লোবাল নেটওয়ার্কের তার কিংবা বেতার যেকোনো একটির মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েই থাকতে হবে। এরপর গ্লোবাল নেটওয়ার্কে জড়িত থাকা বিভিন্ন কম্পিউটারের সাথে নিজেদের কম্পিউটার রাউটার এবং সার্ভারের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে বিভিন্ন ডাটা এবং ইনফর্মেশন সংগ্রহ করে নেয়। মূলত এভাবেই কাজ করে ইন্টারনেট।
নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কী কী
এক বা একাধিক কম্পিউটার, যেকোন মাধ্যমে একটির সাথে অপরটির জোড়া লাগানোকে বা কানেকশন তৈরি করাকে নেটওয়ার্ক বলে। এখন মূলত জানার বিষয় হল নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি। নেটওয়ার্ক মূলত দুই প্রকার। আসলে নেটওয়ার্কের প্রকার বলতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কে বোঝায়। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকার গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
মালিকানার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক দুই প্রকার। এই দুই ধরনের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নিয়েই নেটওয়ার্কের পরিধি। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গুলো হচ্ছে-
- প্রাইভেট নেটওয়ার্ক
- পাবলিক নেটওয়ার্ক
প্রাইভেট নেটওয়ার্কঃ প্রাইভেট আইপি এড্রেস ব্যবহার করে যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয় তাকে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলে। প্রাইভেট নেটওয়ার্কের আইপি এড্রেস কে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এ এই ধরনের আইপি এড্রেস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পাবলিক নেটওয়ার্কঃ পাবলিক নেটওয়ার্ক হচ্ছে উন্মুক্ত নেটওয়ার্ক। যা সকলের ব্যবহার করতে পারে।পাবলিক নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত নেটওয়ার্ক হওয়ার ফলে ব্যবহারকারীর তথ্যর ঝুঁকি থাকে। পাবলিক নেটওয়ার্কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
- পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক
- ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক
পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কঃ যে নেটওয়ার্কে প্রতিটি কম্পিউটার রিসোর্স শেয়ার করার ক্ষেত্রে সামান্য ভূমিকা পালন করে সেই নেটওয়ার্কে প্রিয়ার টু প্রিয়ার নেটওয়ার্ক বলা হয়। যদি ১০ টি কম্পিউটার একটি প্রিন্টার যুক্ত থাকে তাহলে সকল কম্পিউটার প্রিন্ট এর জন্য একই সুবিধা পাবে।
ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্কঃ যে সকল নেটওয়ার্কে কেন্দ্রীয় একটি সার্ভার কম্পিউটার থাকে সেই নেটওয়ার্ক পদ্ধতিকে ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক বলে। সার্ভার কম্পিউটারে সকল কম্পিউটার যুক্ত থাকে। সার্ভার কম্পিউটার যে রিসোর্স শেয়ার করবে সেগুলোই তাদের ব্যবহার করতে হবে। তবে সার্ভার কম্পিউটারে কোন কিছু শেয়ার করা যায় না।
ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক আবার চার প্রকার-
- PAN (Personal Area Network)
- LAN (Local Area Network)
- MAN (Metropolitan Area Network)
- WAN (Wide Area Network)
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর সুবিধা
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি, এটি কিভাবে কাজ করে, নেটওয়ার্ক সিস্টেম কত প্রকার ইতিমধ্যে আমরা এসব কিছু সম্পর্কে জেনে গেছি। আপনি যদি ওপরে মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে সবকিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমরা তো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি, কিন্তু আমরা কি জানি এর সুবিধা কি। চলুন জেনে নেই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সুবিধা-
- কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সময়ের অপচয় কম হয় এবং খরচও কম লাগে।
- কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঘরে বসে ক্রেতা কেনা কাটা করতে পারে।
- কম্পিউটার নেটওয়ার্ক দ্বারা ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে বুলেটিন বোর্ড গঠন করা যায়।
- কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম দ্বারা ইমেইল প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।
- কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে খুব সহজে বিশ্বের একস্থান হতে অন্য স্থানে ডাটা ও সংবাদ পাঠানো যায়।
- এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রয়োজনে তথ্যসমূহ সংরক্ষণ করে রাখা যায় এবং সময়মত গ্রাহকের নিকট পাঠানো যায়।
- কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে ঘরে বসে দূর দূরান্তের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা যায়।
- ছাত্র-ছাত্রী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের না গিয়ে যেকোনো ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে শিক্ষকের কাছ থেকে যেকোনো সমস্যার সমাধান নিতে পারে।
এছাড়াও কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে আমরা দৈনন্দিন কাজের প্রায় সব ক্ষেত্রে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকি। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ফলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়।
সর্বশেষ বলা যায় যে নেটওয়ার্ক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই অপরিসীম। আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে থাকেন, করি তাহলে আপনি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে এক বিস্তার ধারণা পাবেন। নেটওয়ার্ক সিস্টেমের কোন জায়গা যদি আপনার বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে আপনি অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি আমাদের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url