নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম - চুল কাটলে ব্যাথা পাইনা কেন
চুল কাটলে ব্যাথা পাইনা কেন, নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম, নখ-চুল ইত্যাদি বাইরে ফেলার কিছু ক্ষতিকর দিক, নখ কাটা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা আপনি কি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন, নিশ্চয়ই জানেন না। যদি না জেনে থাকেন তাহলে এখনি জেনে নিন। নিচে সবগুলোই বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বৈজ্ঞানিকভাবে নখ ও চুলের যে বর্ণনা করা হয়েছে, ইসলামে তার থেকে দ্বিগুণভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অবশ্যই আমাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। আমি আজকে আপনাদেরকে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে জানাবো নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম নাকি বাহিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। সব কিছু জানতে পোস্টে মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম - চুল কাটলে ব্যাথা পাইনা কেন
- চুল কাটলে ব্যাথা পাইনা কেন
- নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম
- নখ-চুল ইত্যাদি বাইরে ফেলার কিছু ক্ষতিকর দিক
- নখ কাটা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা
চুল কাটলে ব্যাথা পাইনা কেন
প্রশ্নটি অনেক জটিল হলেও এর উত্তরটি খুব সহজ। সামান্য চিমটি কাটলে যেখানে আমরা ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠি, সেখানে নেইল কাটারে নখ কাটলে বা কাঁচি দিয়ে চুল কাটলে টেরও পাই না, এ তো নিশ্চয়ই রহস্যজনক। আসল বিষয়টি হলো-
আমাদের শরীরে ‘কেরাটিন’ নামে একটি পদার্থ আছে। এদিয়ে নখ তৈরি হয়। আমরা জানি, অনেক কোষ দিয়ে আমাদের শরীর তৈরি। নখ, চুলও এক ধরনের কোষ। চামড়ার বাইরে বের হলে এই কোষগুলি দরকারি পুষ্টির অভাবে এক সময় মারা যায়। তাই নখ, চুল এক ধরনের মরাকোষ।
আঙুলের চামড়ার ভেতরে নখ থাকে। আবার নখের নিচের চামড়ার ভেতরে নখ থাকে। আবার নখের নিচের চামড়ায় এক ধরনের নরম সুতা বা আঁশ থাকে। এ আঁশগুলো নখের সাথে আটকে থাকে। নখগুলোকে জায়গা মতো ধরে রাখে। এজন্য নখ শক্ত হয়, নড়াচড়া করে না। মৃত বা মরাকোষ দিয়ে তৈরি বলে নখ কাটলে আমাদের ব্যাথা লাগে না।
চুলও চামড়ার ভেতরে খুবই নরম অবস্থায় থাকে। কিন্তু চামড়ার বাইরের দিকের চুল দরকারি পুষ্টির অভাবে শক্ত হয়ে যায় এবং একসময় মরে যায়। এ কারণে চুল কাটলেও আমাদের ব্যাথা লাগে না।
নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম
মাথার চুল, নখ ইত্যাদি মাটির নিচে পুঁতে ফেলা অধিক উত্তম। তবে জরুরি নয়। ইবনে উমর রা. সহ একাধিক সাহাবির আমল থেকে পুঁতে ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু এ বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন সহিহ হাদিস আসে নি। দু একটা হাদিস পাওয়া গেলেও সনদগতভাবে সেগুলো দুর্বল।
ইমাম বাইহাকি শুয়াবুল ঈমান কিতাবে বলেন,
قد روي حديث دفن الشعر والأظفار من أوجه ، كلُّها ضعيفة" نصب الراية في تخريج أحاديث الهداية " (1/189)
“নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা সম্পর্কে একটি হাদিস একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সবগুলো সূত্র দুর্বল।” [নাসবুর রায়াহ ফি তাখরিজি আহাদিসিল হিদায়াহ ১/১৮৯]
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ বলেন,
يَدفن الشعر والأظفار ، وإن لم يفعل : لم نَرَ به بأساً
“চুল ও নখ মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। তবে না পুঁতলেও আমরা তাকে কোন সমস্যা মনে করি না।” [খাল্লাল আত তরাজ্জুল কিতাবে এটি বর্ণনা করেছেন, পৃষ্ঠা নং ১৯]
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রহ. বলেন,
”আহলুল ইলমগণ উল্লেখ করেছেন যে, চুল ও নখ পুঁতে ফেলা অধিক উত্তম। এ মর্মে কিছু সাহাবি থেকে আসার (সাহাবিদের মতামত ও কর্ম) পাওয়া যায়। তবে তা প্রকাশ্যে বাইরে থাকার জন্য বা কোন জায়গায় ছুঁড়ে ফেললে গুনাহ হবে এমনটি নয়।” [গ্রন্থ: মাজমু ফাতাওয়া শাইখ উসাইমিন, ১১ তম খণ্ড, প্রশ্ন নং ৬০]
নখ-চুল ইত্যাদি বাইরে ফেলার কিছু ক্ষতিকর দিক
নখ এবং মাথার চুল কাটার পরে সেগুলো বাহিরে খোলা জায়গায় ফেলার কিছু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে, যা নিচে স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনা করা হলো-
১. এসব জিনিস দাফন না করলে এগুলোর অপব্যবহারও হতে পারে। অনেক সময় এগুলো যাদুকরদের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তারা মাথার চুল, নখ ইত্যাদি দ্বারা যাদু করে। তাই সতর্কতার স্বার্থে গর্ত করে মাটির নিচে পুঁতে ফেলাই অধিক নিরাপদ।
২. এগুলো মাধ্যমে রোগ-জীবাণুও ছড়াতে পারে। যেমন: কোনো ব্যক্তি যদি তার কেটে ফেলা চুল সঠিকভাবে দাফন না করে, তাহলে তা বাতাসে উড়ে খাবারে বা পানিতে মিশে যেতে পারে। ফলে তার সঙ্গে লেগে থাকা জীবাণু পেটে গিয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
৩. অনেকে আবার কেটে রাখা চুল বিক্রি করে দেন, যা শরিয়তে নিষিদ্ধ। কারণ মানব অঙ্গ বিক্রি করা শরিয়তে জায়েজ নেই। সাধারণত এই চুলগুলো বিদেশে বিক্রি হয়ে যায়। এগুলো দিয়ে সাধারণত পরচুলা, এক্সটেনশনে পরিণত করা হয়। উন্নত বিশ্বে এসবের অনেক দাম। ২০১৭ সালে চুল রপ্তানি থেকে মিয়ানমারের আয় ছিল ৬.২ মিলিয়ন ডলার।
[جاء في " الموسوعة الفقهية " ( 26 / 102 ) :
৪. এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, মানুষের চুল থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বানানো হচ্ছে হীরা। চুল থেকে কার্বন কণাকে বের করে নিয়ে তা দিয়ে হীরা তৈরি হয়। এ পদ্ধতিতে হীরা তৈরির জন্য পশ্চিমা বিশ্বে অনেক কম্পানি গড়ে উঠেছে। তারা এ ব্যবসায় করে উপার্জন করছে কোটি কোটি ডলার। কিন্তু এটিও মানব অঙ্গের সম্মানহানি করে। কারণ মানব অঙ্গকে অলংকার হিসেবে ব্যবহার করাও তার সম্মানহানি করে।
৫. বর্তমান যুগে মানুষের চুল বা অন্যান্য অঙ্গ থেকে তার ডিএনএ ক্লোন করা সম্ভব। যার মাধ্যমে যে কাউকে বড় কোনো অপরাধে ফাঁসিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
(উৎস: ২, ৩, ৪ ও ৫ নং পয়েন্ট নেয়া হয়েছে কালের কণ্ঠ ডট কম থেকে)
যাহোক, শহরে থাকার কারণে বা অন্য কোন কারণে এগুলো মাটিতে পোঁতা কষ্টসাধ্য বা অসম্ভব হলে পলিথিনে ভরে ভালো করে মুখ বেঁধে ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থানে ফেলে দিলেও কোন গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানেঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব)
নখ কাটা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা
সুন্নাতি তরিকায় নখ কাটার কি কোনো বিশেষ নিয়ম এবং কোনো বিশেষ সময় আছে? আর রাতের বেলা নখ কাটা কি ঠিক?
নিয়মিত নখ কাটা ইসলামের অন্যতম বিধান ও সুন্নাত। নখ কাটার জন্য কোন নির্ধারিত নিয়ম বা দিবস রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দেননি। বিভিন্ন বই এ নখ কাটার বিভিন্ন নিয়ম, উল্টোভাবে নখ কাটা, অমুক নখ থেকে শুরু করা ও অমুক নখে শেষ করা, অমুক দিনে নিখ কাটা বা না কাটা ইত্যাদির ফযীলত বা ফলাফল বর্ণনা করা হয়েছে।
এগুলো সবই পরবর্তী যুগের প্রবর্তিত নিয়ম। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এ বিষয়ে যা কিছু প্রচলিত আছে সবই বাতিল, বানোয়াট ও মিথ্যা।নখ কাটার জন্য এ সকল নিয়ম পালন করাও সুন্নাত বিরোধী কাজ। রাসুল (সাঃ) নখ কাটতে নির্দেশ দিয়েছেন। কোন বিশেষ নিয়ম বা দিন শিক্ষা দেননি।
কাজেই যে কোন ভাবে যে কোন দিন নখ কাটলেই এই নির্দেশ পালিত হবে। কোন বিশেষ দিনে বা কোন বিশেষ পদ্ধতিতে নখ কাটার কোন ফযীলত কল্পনা করার অর্থ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শিক্ষাকে অপূর্ণ মনে করা এবং তাঁর শিক্ষাকে পূর্ণতা দানের দুঃসাহস দেখানো। আল্লাহ যেন আমাদের সহীহ সুন্নাতের মধ্যে জীবন যাপনের তওফীক প্রদান করেন।
(সূত্রঃ বই -ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর হাদীসের নামে জালিয়াতি)
সবথেকে বলা যায় যে নখ ও চুল মাটিতে পুতে ফেলা উত্তম। আপনি পোস্টটি সম্পন্ন পড়লে অবশ্যই এতক্ষণে জেনে গেছেন। অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে সতর্ক হব এবং অন্যকে সতর্ক হওয়ার জন্য উৎসাহ করব।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url