সাম্মাম ফলের উপকারিতা - সাম্মাম ফল কিভাবে খায়
"সাম্মাম" নামটি হয়তো অনেকের কাছে অপরিচিত। জি-হ্যাঁ আজকে এই অপরিচিত ফলটি নিয়েই বিশেষভাবে আলোচনা করব। আজকে আপনারা জানতে চলেছেন সাম্মাম ফলের উপকারিতা, সাম্মাম ফলের দাম, সাম্মাম ফল কিভাবে খায়, সাম্মাম ফল চাষ পদ্ধতি, সাম্মাম ফলের বীজ কোথায় পাওয়া যায় এই সবকিছু জানতে পারবেন এই পোষ্টের মাধ্যমে।
সাম্মাম ফলের উপকারিতা - সাম্মাম ফল কিভাবে খায়, আমরা যারা একটু এই ফলটি সম্পর্কে জানি তাদের মনে প্রশ্ন টি কমন। আপনাদের প্রয়োজনের তাগিদেই এই ফলটি সম্পর্কে আমি আজকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। সবকিছু বিস্তারিত ভাবে জানতে এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ সাম্মাম ফলের উপকারিতা - সাম্মাম ফল কিভাবে খায়
সাম্মাম ফলের উপকারিতা
"সাম্মাম" এই নামটি অবশ্যই আপনাদের নতুন মনে হচ্ছে। আমরা অনেকেই রয়েছি যে এই ফলের সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। আবার অনেকে রয়েছেন যারা এই ফল অনেক ভালোভাবে চিনেন। সাম্মাম মূলত একটি আরবিয়ান ফল। এটি আরবের মরুভূমিতে উৎপন্ন হয়। এ ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি রয়েছে এর বিভিন্ন পুষ্টিগুণ।
মাম্মাম ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। মূলত আপনি যদি নিয়মিত এই ফলটি খেয়ে থাকেন। তাহলে উক্ত ফলটি আপনার শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করবে। সেই সাথে আপনার শরীরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে। যার কারণে বর্তমান সময়ে এই ফলটির চাহিদা ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়াও এই ফোনের আরো বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। চলুন সে উপকারিতা গুলো জেনে নেই-
- সাম্মাম ফলে রয়েছে ৯০ ভাগ পানি, যা শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে এবং হজমে সহায়তা করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
- সাম্মাম ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম সহ নানা উপাদান।
- সাম্মাম ফলে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ভিটামিন বেটা ক্যারোটিন।
- চোখের দৃষ্টি শক্তি স্বাভাবিক রাখতে সহযোগিতা করে।
- চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতেও উপকার করে।
এছাড়াও এই ফল থেকে আরও বিভিন্ন ধরনের উপকারী উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। যদি হাতের নাগালে পান তাহলে অবশ্যই এই ফলটি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
সাম্মাম ফলের দাম
এই সাম্মাম ফলের দাম কত টাকা সেটা হলে স্পষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয়। কেননা এটা মূলত বর্তমান পরিস্থিতি এবং মানুষের চাহিদের উপর নির্ভর করবে। তবে সাধারণ ভাবে একটি সম্মাম ফল মূলত ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে। আবার সময় সময় অন্তর অন্তর এই দামের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
সাধারণত বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এটা গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে একটি ফল বিক্রি হয়। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নিউজ এটিএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল এটি বিশ্বের সবচাইতে দামি ফল যার এক কেজি ফলের মূল্য .২০ লাখ টাকা। জাপানে এই ফলটিকে বলা হয় ইউবাড়ি মেলন। ইউবাড়ি মেলন জাপানের এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষের কাছে বিক্রি করা হয়।
সাম্মাম ফল কিভাবে খায়
যেহেতু এই ফলটি আমাদের সকলের কাছেই নতুন এবং অপরিচিত। এজন্য সকলের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, সাম্মাম ফল কিভাবে খায়? যদি আপনার মনে ঠিক এই ধরনের প্রশ্ন জাগে তাহলে আমি আপনাকে বলব এই ফলটি মূলত অনেকটা তরমুজের মতো। অর্থাৎ আমরা যেভাবে তরমুজ খাই ঠিক একই ভাবে সাম্মাম ফল খেতে পারব।
মূলত এই সাম্মাম ফলটি অনেক সুস্বাদু এবং প্রচুর পরিমাণে রসালো হয়ে থাকে। যার কারণে একজন নতুন ব্যক্তি যখন এই ফল টি খাবে। তখন অবশ্যই তার কাছে এই সাম্মাম ফল টি অনেক অনেক বেশি ভালো লাগবে। সাম্মাম ফল দেখতে তরমুজের মত, তরমুজের মতই এর উপরের ত্বক শক্ত এবং মোটা। তাই এটা তরমুজের মতোই খালি ফালি করে কেটে পরিবেশন করতে হয়। এটি তরমুজের মতই খুবই রসালো ফল।
সাম্মাম ফল চাষ পদ্ধতি
রকমেলন হল মাস্কমেলন গোত্রের একটি উচ্চমূল্যের বিদেশি ফল। আরবে একে সাম্মাম বলে। ফলের উপরের ত্বক পাথর (রক) এর মত, তাই অস্ট্রেলিয়াতে রকমেলন নামে পরিচিত। উর্দুতে খরবুজ বা খরবুজা, আমেরিকাতে ক্যান্টালোপ, এশিয়াতে মেলন নামে পরিচিত।
যেহেতু এই ফলে চাহিদা অনেক বেশি সেজন্য এখন সকলেই এই ফল চাষের জন্য উদ্বেগ হয়ে রয়েছেন। কিন্তু ফলটি নতুন হওয়ার জন্য সকলে এর সঠিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা নেই। আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনি সঠিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
যেহেতু আমাদের বাংলাদেশে এই সাম্মাম ফল টি একেবারেই নতুন। সেহেতু একজন নতুন ব্যক্তি হিসেবে আমরা বুঝতে পারি না যে, কিভাবে এই সাম্মাম ফল টি চাষ করতে হয়। তো আমরা যেভাবে অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করি। ঠিক তেমনি ভাবে আপনি একই প্রকার সাম্মাম চাষ পদ্ধতি দেখতে পারবেন।
বিজ বা জাতঃ মূলত কৃষি গবেষণাগার এর নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশেষ একটি সাম্মাম ফলের বীজ নির্বাচন করা হয়েছে। এবং সেই সাম্মাম ফলের বীজের নাম দেওয়া হয়েছে, হানি জুস। আর আপনি যদি এই বীজ ১০ গ্রাম কিনে নেন। তাহলে আপনি এই ১০ গ্রাম বীজ থেকে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। এবং এই বীজ থেকে প্রায় ২২০০ থেকে ২৫০০ পর্যন্ত চারা সংগ্রহ করা যায়।
সাম্মাম চাষের উপযুক্ত সময়ঃ সাধারণত খোলা মাঠে হানি জুস জাতটি ২ বার চাষ করা যায়। একবার শীত চলে যাওয়ার পর (রাতের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে), মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ (ফালগুন) মাসে, আরেক বার তাপমাত্রা কমে গেলে (দিনের তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে) মধ্য জুন- মধ্য সেপ্টেম্বর (আষাঢ়-ভাদ্র) মাসে। বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি থেকে বাঁচাতে পলি টানেল বা পলি হাউজ করলে খুব ভালো ফসল পাওয়া সম্ভব। এছাড়া বছরের প্রায় পুরো সময়ে গ্রিন হাউজে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করেও চাষ করা সম্ভব।
জমি প্রস্তুতঃ জমি প্রথমে চাষ দিয়ে পরে বিঘা প্রতি ৫ ট্রলি (৫ টন) শুকনা গোবর ও প্রায় ২৫০ কেজি জিপসাম দিয়ে পুনরায় চাষ দিয়ে ৩ সপ্তাহ ফেলে রাখতে হবে। মাটির পি এইচ ৬ এর নিচে হলেই কেবল শতক প্রতি ৪ কেজি চুন দিতে হবে। তাহলে, বাকি টুকু হবে (৩.৫) কেজি জিপসাম দিলেই হবে। মাটিতে চুন দিলে আর ম্যাগসার দেয়ার প্রয়োজন নেই।
মূলত এভাবেই সঠিক বীজ, সঠিক সময় এবং সঠিকভাবে জমি প্রস্তুত করে সম্মান ফল চাষ করা যায়। আপনি যদি এটি ভালো ভাবে চাষ করতে পারেন তাহলে আপনি এখান থেকে অধিক পরিমাণে লাভবান হবেন। কেননা এই ফলের একটি গাছ থেকেই এক চালানে ৮ থেকে ১২ টা ফল পাওয়া যায়।
সাম্মাম ফলের বীজ কোথায় পাওয়া যায়
এই গাছের সঠিক যত্ন এবং ফলের পরাগায়ণ ভালোমত হলে এক একটি গাছ থেকে ৮ থেকে ১২ টি পর্যন্ত ফল পেতে পারেন। পরাগায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে হাতে পরাগায়ণ করতে পারেন। ফলের আকৃতি গোলাকার হবে এবং এক একটি ফলের ওজন ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি ওজন হতে পারে। পরিপক্কভাবে ফল পাকার ২ থেকে ৩ দিন আগেই ফলটি গাছ থেকে কেটে সংরক্ষণ করতে পারেন এবং বাজারজাত করতে পারেন।
রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন, হানিডিউ মেলন, গালিয়া মেলন ও পার্সিয়ান মেলন নামে পরিচিত এই সুস্বাদু ফল। আরবিতে অনেক দেশে সাম্মামও বলে থাকে এটিকে। এই ফল অনেক প্রজাতির হয়ে থাকে, রং ও আকৃতি যেমনই হোক ভিতরটা একদম আমাদের দেশি বাঙ্গির মতো এবং মিষ্টি-সুস্বাদু।
খোলা জমিতে চাষ করার জন্য এই ফলের বীজ আপনি আপনার এলাকার বাজারে যেকোনো সিনজেনটার বা ওষুধের দোকানে পেয়ে যাবেন। ধানের প্যাকেট জাত বীজের মতো এটিও প্যাকেট পাওয়া যায়।
সর্বশেষে বলা যায় যে এই ফলটি অনেক সুস্বাদু এবং উপকারী। যদিও এটি আরবিয়ান ফল কিন্তু এখন এটি আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, এবং এটি আমাদের দেশে চাষও করা যায়। আপনারা ইতিমধ্যে তো জেনে গেছেন এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে। এটি কিভাবে চাষ করতে হয় সেই সম্পর্কেও উপরে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url