রমজান মাসে কি বিয়ে করা যায় - সেহরির পর সহবাস করা যাবে কিনা
চলতেছে রমজান মাস এই রমজান মাসকে নিয়ে আমাদের মনে নানারকম প্রশ্ন জাগে। যেহেতু রমজান মাস একটি ইবাদত বন্দেগীর মা সেহেতু এই মাসে আমাদেরকে সর্ব অবস্থায় পবিত্র থাকতে হবে।আমাদের মনে বেশিরভাগ প্রশ্ন জাগে রমজান মাসে কি বিয়ে করা যায়, এছাড়াও আরো একটি প্রশ্ন আমাদের মনে বেশি জানে সেটি হল সেহরির পর সহবাস করা যাবে কিনা।
উপরে বর্ণিত প্রশ্নগুলোর সমাধান তো আজকে পাবেন তার সাথে আরো জানতে পারবেন রমজান মাসে স্ত্রী সহবাস করা যাবে কি, রমজান মাসে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম , রোজা রেখে স্ত্রীকে কি চুমু দেওয়া যাবে, রোজা রেখে স্বামী স্ত্রী কি কি করতে পারবে, অপবিত্র অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি এই সবগুলো প্রশ্নের সমাধান আজকে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন।
পোস্ট সূচীপত্র
রমজান মাসে কি বিয়ে করা যায়
বিবাহ আল্লাহ তায়ালা সবার জন্য ফরজ করেছেন। কিন্তু রমজান মাস সিয়াম পালনের মাস, তাই অনেকের মনে প্রশ্ন রমজান মাসে কি বিয়ে করা যায়। আর বিয়ে করতে হলে কোন সময় টাতে করতে হবে বা কোন সময়টাকে করা জায়েজ আছে। এ ধরনের প্রশ্ন প্রায় আমাদের সকলের মনেই জাগে।
কেননা সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। আর রমজান মাসের সিয়াম পালন করা প্রত্যক্ষ মুসলমানের জন্য ফরজ। আর রমজান মাসের নানা কাজ থেকে বিরত থাকতে হয় এইজন্য সকলের মনে এ ধরনের প্রশ্ন জাগে। তাই আমাদের সঠিক নিয়ম এবং তথ্যটি জানা দরকার।
আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ এই প্রসঙ্গে একটি সুন্দর বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি বলেন হ্যাঁ রমজান মাসে বিয়ে করা সিদ্ধ নিষিদ্ধ কিছুই না, রমজান মাসেও বিয়ে করা জায়েজ রয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবে রমজান মাসে বিয়েতে খাওয়া-দাওয়া রাতে হবে এবং বিয়েও রাতেই হবে, এটাই স্বাভাবিক কথা।
রমজান মাসে স্ত্রী সহবাস করা যাবে কি
সিয়াম শব্দের অর্থ হলো বিরত থাকা। শুধু যে পানাহার থেকে বিরত থাকা তা নয় সকল কার্যকারা থেকে নিজেকে বিরত রাখাই হচ্ছে সিয়াম। রমজান মাসে রোজা রাখা অবস্থায় ভুল করেও স্ত্রী সহবাস করা যাবে না। তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং এটি করা জায়েজ নয়।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সঙ্গে খিয়ানত করছিলে।
অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)
আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে রমজান মাসে ইফতারির পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদিকের আগ
পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস হালাল করেছেন। তবে রমজানে সহবাসের ক্ষেত্রে অবশ্যই
সাবধান হতে হবে।
কেউ যদি রমজান মাসের রোজা রাখা অবস্থায় সহবাসে লিপ্ত হয়
তাহলে সে গুনহাগার হবে, তার সেদিনের রোজা নষ্ট হয়ে যাবে, সেদিনের বাকি অংশ
পানহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে, এদিনের রোজার কাজা করা ওয়াজিব হবে।
রমজানে সহবাস সম্পর্কে সূরা আল-বাকারা’র ১৮৭ নং আয়াতে বলা হয়, রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। আর পবিত্র কোরআনের এই আয়াত থেকে এটা প্রমাণিত হয়, রোজাদারের জন্য দিনের বেলা সহবাস হালাল করা হয়নি।
তবে কোনো স্বামী যদি জোর করে স্ত্রীর সাথে যৌনসম্পর্ক করেন, সেক্ষেত্রে স্বামীর রোজা ভেঙ্গে গেলেও স্ত্রীর রোজা ভাঙবে না। ইবনে আব্বাস বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখ করা হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার উম্মতের ওপর থেকে ত্রুটিবিচ্যুতি, ভুলে যাওয়া ও জোর করিয়ে করানো কাজকে মার্জনা করেছেন।
রমজান মাসে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম
ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইফতারের পরে ঈশা পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বৈধ ছিল। যদি কেউ এর পূর্বে শূয়ে পড়তো। তবে নিদ্রা আসলে পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ হারাম হয়ে যেত। এর ফলে সাহাবাগন কষ্ট অনুভব করছিলেন। অতপর আল্লাহ আয়াত নাজিল করে মাগরিব থেকে সুভহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগের আদেশ দান করেন।
সহবাস করতে গিয়ে যদি গোসল করতে গিয়ে পানাহারের সময় শেষ হয়ে যায় তাহলে ওজু করে সেহরি পুরা করে গোসল করে নামাজ আদায় করে নিবে। কাজেই আপনারা রাতে সহবাস করতে পারেন তবে মনে রাখবেন ফজরের নামাজের পুর্বে অবশ্যি নিজেকে পবিত্র করে নিতে হবে।
তবে রমজান মাসে নিজেকে এসব কিছু থেকে বিরত রাখাই সর্ব উত্তম। যদি বিরত না রাখতে পারেন তাহলে খুব সতর্কতার সহিত বিধান অনুযায়ী সহবাস করতে হবে।
রোজা রেখে স্ত্রীকে কি চুমু দেওয়া যাবে
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শারীরিক স্পর্শ বা শুধু চুমুর কারণে রোজা ভাঙবে না। তবে এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে, সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোজার সময় এগুলো পরিহার করাই উত্তম। তবে যৌন মিলনের দ্বারা কেউ রোজা ভাঙলে সেই রোজা পরবর্তীতে কাযা করতে হবে। এবং একইসাথে কাফফারা দিতে হবে।
আবার, কেউ যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের বীর্যপাত ঘটান, সেক্ষেত্রে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেমনঃ নিজে বা স্ত্রী কর্তৃক হস্তমৈথুনের মাধ্যমে যদি বীর্যপাত ঘটে, এক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
রোজা রেখে স্বামী স্ত্রী কি কি করতে পারবে
রমজান মাসে রোজা রাখা অবস্থায় স্বামী স্ত্রী প্রায় সকল কাজই করতে পারবেন কিন্তু সহবাস করা যাবে না। তবে রোজা রাখা অবস্থায় স্থির থেকে দূরে দূরে থাকায় সর্বোত্তম। আপনি চাইলে আপনার স্ত্রীকে চুম্বন করতে পারবেন কিন্তু বেশি উত্তেজিত হওয়া যাবে না।
বেশি উত্তেজিত হওয়ার ফলে যদি আপনার বীর্যপাত হয় তাহলে আপনার রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। আপনাকে আবার কাজা রোজা পালন করতে হবে এবং কাফফারা দিতে হবে। সুতরাং রোজা রেখে স্ত্রীর কাছাকাছি না যাওয়াই উত্তম।
সেহরির পর সহবাস করা যাবে কিনা
রমজান মাসে সেহরি খাওয়ার পরে আমরা অনেকেই শুয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি বা শুয়ে থাকি। এই সময় আমাদের অনেকের যৌন উত্তেজনা হয়। এজন্য আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন হচ্ছে সেহরির পর সহবাস করা যাবে কিনা। তাহলে আমি বলব আপনি কি সিয়াম শব্দের অর্থ বোঝেন না বা জানেন না।
আপনি যদি সিয়াম শব্দের অর্থ জানতেন তাহলে এই প্রশ্ন কখনোই করতেন না। কেননা সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। আর সেহরির সেস সময় পর থেকে শুরু হয়ে যায় সিয়াম পালন। এই সময় আপনি কোনভাবেই স্ত্রী সহবাস করতে পারবেন না। এই সময় যদি আপনি স্ত্রীর সহবাস করেন তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
শুধু সহবাস নয় যদি আপনি এরকম সময় অধিক উত্তেজিত হয়ে স্ত্রীকে চুম্বন করেন এবং আপনার যদি বীর্যপাত হয় তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আপনাকে আবার পুনরায় রোজা পালন করতে হবে এবং কাফফারা দিতে হবে। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
অপবিত্র অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
জ্বি হ্যা অপবিত্র অবস্থায় রোজা রাখা যাবে। দৈনন্দিন জীবনে কারণে আমাদের শরীর অপবিত্র হয়ে যায়। অপবিত্র অবস্থায় রোজা রাখা যাবে অবশ্যই কিন্তু আপনাকে নামাজের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। ফরয গোসল ছাড়া রোজা হবে ঠিকই কিন্তু আপনি যদি নামাজ কাজা করেন তাহলে আপনার কবিরা গুনা হবে।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url