সাদা স্রাব কেন হয় - সাদা স্রাব বেশি হলে করনীয়
মেয়েদের যোনিপথ বা মাসিকের রাস্তা দিয়ে স্রাব যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বেশিরভাগ মেয়ের ক্ষেত্রেই মাসিক শুরু হওয়ার ১ - ২ বছর আগে থেকে সাদা স্রাব যাওয়া শুরু হয়। তাই জেনে নিন সাদা স্রাব কেন হয়। কেন হয় এটা জানার পরে অবশ্যই জানা দরকার সাদা স্রাব বেশি হলে করনীয় কি।
এছাড়াও স্রাব বের হওয়া সম্পর্কে আমাদের মনে আর নানারকম প্রশ্ন থাকে যেগুলো সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানা অত্যন্ত জরুরি। তাই সাদা স্রাব হলে কি ক্ষতি হয়, সাদা স্রাব কি খেলে ভালো হয়, সাদা স্রাব হলে কি বাচ্চা হয়, সাদা স্রাব হলে কি নামাজ হবে এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
পোস্ট সূচিপত্র
সাদা স্রাব কেন হয়
মাসিক বা সাদা স্রাব হওয়া প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাদা স্রাব হলে আমরা অনেকে দুশ্চিন্তায় ভুগি, কিন্তু সাদা স্রাব শরীরের কোন ক্ষতি করে না। বরং নারী দেহে সাদাস্রাব তৈরি করার মাধ্যমে শরীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে। যথা-
- মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া থেকে সুরক্ষা করে
- মাসিকের রাস্তা পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে
সাদা স্রাবের পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানায় অনেকে করেন যে তাদের অতিরিক্ত সাদাস্রাব হচ্ছে। আবার অনেকে মনে করেন যে অতিরিক্ত সাদাস্রাবের কারণে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়া ও দুর্বল অনুভব করার মত সমস্যা শরীরের সৃষ্টি হয়।
তখন মেয়েরা এমন ধারণা থেকে সাদাস্রাব বন্ধ করার উপায় জানতে চাই। আসলে আপনাদের এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রাথমিকভাবে সাদা স্রাব শরীরের কোন ক্ষতি করে না বরং শরীরের উপকার করে। তাই এটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগবেন না।
সাদা স্রাব হলে কি ক্ষতি হয়
সাদা স্রাব প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের এটি একটি প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একটি বয়সে সীমা পর থেকে এটি শুরু হয় এবং এটি বয়স সীমার শেষে এটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এই বিষয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। এটি যেহেতু একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তাই এটি অনবরত হতেই থাকবে।
যদিও এটি প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো রকম স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না। তবে যদি মাত্রা অধিক হয় তাহলে শরীর একটু ভেঙ্গে পড়তে পারে। তবে বেশি ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। এটি যে আপনার একদম মারাত্মক ক্ষতি করবে এমনটি নয়। সাদা স্রাব যদি অধিক মাত্রায় হয় তাহলে করণীয় কি সেই বিষয়ে আমরা নিচে বলে দেব।
কখনো যদি স্রাবের সাথে মাসিকের পথে এবং আশপাশে চুলকানি হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কয়েক ধরনের জীবাণু থাকতে পারে। একটি জীবাণুর নাম ট্রাইনোমোনিয়াসিস। আবার ছত্রাক যার নাম ক্যানডিজ দিয়েও এই সংক্রমণ হতে পারে।
যদি স্রাব যেতে থাকে, পাজামা-প্যান্টি ভিজে যায়, গন্ধযুক্ত স্রাব হয় কিংবা অস্বাভাবিক চুলকানি থাকে এবং যদি আপনার শরীর দুর্বল লাগে কিংবা জ্বর আসে তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন। নিজে নিজে চিকিৎসা নেবেন না কিংবা অবহেলা করবেন না। বিশেষজ্ঞ গাইনোলজিস্ট এর সঙ্গে এই বিষয়ে পরামর্শ করবেন এবং দ্রুত চিকিৎসা নিবেন।
সাদা স্রাব বেশি হলে করনীয়
মহিলাদের যোনিপথ দিয়ে সাদা স্রাব বের হওয়া একটি সাধারন প্রক্রিয়া। চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই এটি কোন রোগ নয়। কিন্তু মহিলাদের জন্য এটি খুব সমস্যা তৈরি করে। যার কারণে শরীরে নানারকম অস্বস্তি ও হাতে পায়ে হালকা ব্যথা করে। তাহলে চলুন জেনে নেই সাদা স্রাব বেশি হলে করণীয় কি-
- সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য যৌনাঙ্গ পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখতে হবে। যোনিপথে কখনো ডিওডোরেন্ট বা সুগন্ধযুক্ত ওয়াইপ ব্যবহার করবেন না।
- ওদের টাইট এবং চিপা প্যাড বা পায়জামা পরা যাবে না। বায়ু সঞ্চালন করতে পারে এমন সুতি কাপড় পড়তে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাহলে এটি হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে যাবে। হলেও অধিক পরিমাণে হবে না।
- যদি আপনার শরীরে রক্ত কম থাকে, তাহলে রক্তের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সবুজ সবজি, ফল ইত্যাদি খাবেন।
- তেল চর্বি জাতীয় অর্থাৎ মসলাদার খাবার একটু কম খাবেন।
- ৩ গ্রাম শতাবরি বা সাদা মুসলি নিন, এতে ৩ গ্রাম মিছরি মেশান, এরপর গরম দুধের সাথে পান করুন।
- প্রতিদিন কলা খান, এরপর দুধে মধু দিয়ে পান করুন, এতে আপনার স্বাস্থ্যও সঠিক থাকবে এবং স্রাবের জন্য হওয়া দুর্বলতাও কমে যাবে। কমপক্ষে তিনমাস পর্যন্ত এই উপায়টি ব্যবহার করুন। দুধ ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তারপর তাতে মধু মেশাবেন।
- বেদানার সবুজ পাতা নিন, ২৫-৩০ পাতা, ১০-১২টা গোলমরিচ এক সাথে বেটে নিন। এতে অর্ধেক গ্লাস জল মিশিয়ে পান করুন। এই উপায়কে সকাল-সন্ধ্যে ব্যবহার করুন।
- সমান অনুপাতে ভুট্টা ফল, বড় এলাচ এবং মিছরিকে বেটে নিন। এক সপ্তাহের জন্য দিনে তিনবার করে নিন। এক সপ্তাহ পর, দিনে একবার করে ২১ দিন খান। [ক্রেডিট]
সাদা স্রাব কি খেলে ভালো হয়
আমরা মেয়েরা সকলেই এই প্রাকৃতিক সাধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকি। কিন্তু আসলে এটা কোন রোগ নয় এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। এটি কারো কারো ক্ষেত্রে বেশি হয় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে কম হয়। যেমনই হোক এটা নিয়ে কোন উদ্দেশ্য চিন্তা করার দরকার নেই। সমস্যা যেহেতু রয়েছে তাই সমাধান রয়েছে।
এই জন্যই জানার প্রয়োজন সাদা স্রাব কি খেলে ভালো হয়। এজন্য দেরি না করে জেনে নিন যে খাবারগুলো খেলে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- দইঃ গ্রাসকারী প্রবায়োটিক সমৃদ্ধ দই একটি সুস্থ যোনি উদ্ভিদ উৎপন্ন করতে সক্ষম। তাই নিয়মিত দই খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- টমেটোঃ যদি পারেন তাহলে নিয়মিত কাঁচা টমেটো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কাঁচা টমেটোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে, যা যোনিপথের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- পেঁয়াজের রসঃ প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা ২ চামচ পেঁয়াজের রস এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে পান করবেন। এর ফলাফল আপনি নিজেই চোখে দেখতে পাবেন।
- তুলসী পাতার রসঃ এক বড় চামচ তুলসী পাতার রস নিবেন এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে তা পান করবেন এতে আপনি আরাম পাবেন।
- আদাঃ প্রতিদিন একটু করে আদার রস খাবেন, এতে করে আপনার নানাবিধ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- আমলকিঃ আমলকীর রস এবং মধু নিয়ম করে ১ মাস খাবেন, এতে আপনার সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
- ছোলাঃ ছোলা বাটার সাথে গুড় মিশিয়ে খান, এরপর ১ কাপ দুধে ঘি মিশিয়ে পান করুন।
সাদা স্রাব হলে কি বাচ্চা হয়
আমরা অনেকে দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে একটা প্রশ্ন সম্মুখীন হই যে সাদা স্রাব হলে কি বাচ্চা হবে। আসলে টেনশনের কোন দরকার নেই এটি একটি প্রাকৃতি সাধারণ প্রক্রিয়া। এবং এটি হলেও আপনার বাচ্চা হবে এই নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট চিন্তা করার দরকার নেই।
গর্ভবতী মায়ের শরীরে যদি অত্যাধিক পরিমাণ হরমোন থাকে তাহলে সাদাস্রাব হতে পারে। সন্তান প্রসবের প্রথম কয়েক দিন ও সাদাস্রাব বেশি হতে পারে। এছাড়াও যদি হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন করা হয় তাহলে সাদাস্রাব হয়। তাছাড়াও যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য পিল খাওয়া হয় তাহলে এই সাদা স্রাব হয়।
তবে এই বিষয়টি নিয়ে টেনশন করার দরকার নেই। সাদা স্রাব হলেও বাচ্চা হবে কোন সমস্যা হবে না। তবে হ্যাঁ যদি সাদা স্রাব হয় তাহলে আপনার শরীর কিছুটা ভারী লাগতে পারে বা দুর্বল লাগতে পারে। তবে এই বিষয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই নিজের শরীরের একটু যত্ন নিবেন তাহলে আপনা আপনিই সেরে যাবে।
তাহলে মোটকথা হচ্ছে সাদা স্রাব হলে বাচ্চা হয় কোন সমস্যা হয় না। তাই কোন দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। গর্ভবতী অবস্থায় কোন মানসিক পেশার নিবেন না। সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
সাদা স্রাব হলে কি নামাজ হবে
গবেষণার পর আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, মহিলাদের এই তরল পদার্থ যদি মূত্রাশয় থেকে না এসে গর্ভাশয় থেকে আসে, তাহলে তা পবিত্র। তবে পবিত্র হলেও তা অযু ভঙ্গ করবে। কেননা অযু ভঙ্গকারী হওয়ার জন্য অপবিত্র হওয়া শর্ত নয়। যেমন এই যে বায়ূ- যা পশ্চাদভাগ দিয়ে বের হয়, তার তো কোন দোষ নেই; অথচ তা অযু ভঙ্গ করে।
অতএব, অযু অবস্থায় যদি মহিলার এরূপ তরল পদার্থ বের হয়, তাহলে তা অযু ভঙ্গ করবে এবং তাকে নতুনভাবে অযু করতে হবে। তবে যদি তা অবিরামভাবে চলে, তাহলে অযু ভঙ্গ করবে না। কিন্তু নামাযের সময় হলে সে নামাযের জন্য অযু করবে এবং ঐ অযুতে ঐ ওয়াক্তের ফরয ও নফল নামাযসমূহ আদায় করবে।
ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পরে মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত সাদাস্রাব নাপাক নয়। এটি ইমাম আবু হানিফা রহ. সহ অধিকাংশ আলেমদের অভিমত। আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন এই অভিমত গ্রহণ করেছেন।
সুতরাং তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হবে না। ফলে নামাজের পূর্বে কাপড় পাল্টানোরও প্রয়োজন নাই। তবে যথাসম্ভব, কাপড়ে না লাগানোর চেষ্টা করা উত্তম. তাই প্যাড, আন্ডারওয়্যার অথবা কোন কাপড়ের টুকরো লজ্জাস্থানে দিয়ে নামায পড়া উত্তম।
সুতরাং বলা যায় যে সাদা স্রাব হলে নামাজ আদায় করা যাবে কিন্তু আপনাকে ওযু করে পবিত্র ভাবে নামাজ আদায় করতে হবে এবং আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে নামাজের সময় যেন আপনার কাপড়ে সাদা স্রাব কোন ভাবে না লাগে। তাই যত স্বভাব নিজেকে সংযত রাখবেন।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url