প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ - হলুদ প্রস্রাব থেকে মুক্তির উপায়
প্রস্রাবের রং স্বচ্ছ স্বাভাবিক মানে আপনার শরীর অনেকটা রোগমুক্ত। এ কথা বলার কারণ আমাদের শরীরের অনেক রোগের লক্ষণ বোঝা যায় প্রস্রাবের রং দেখে। যদি আপনার প্রস্রাবের রং হলুদ হয় তাহলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো আপনি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। আর আমরা আপনাদেরকে জানাবো হলুদ প্রস্রাব থেকে মুক্তির উপায়।
এছাড়াও আরো জানতে পারবেন প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ, সকালে প্রস্রাব হলুদ হয় কেন, প্রসাবের রং কেমন হওয়া উচিত, হলুদ প্রস্রাব থেকে মুক্তির উপায়, প্রস্রাবের রং দেখে রোগ নির্ণয় এই সকল বিষয়গুলো আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র
প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ
মানবদেহে ইউরোবিলিন পিগমেন্ট উৎপাদনের কারণে সাধারণত প্রস্রাবের রং ফ্যাকাশে হলুদ হয়। সাধারণত জল কম খেলে প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। তবে শরীর যখন জলশূন্য হয়ে পড়ে, তখন কিডনি প্রস্রাব থেকে জল শোষণ করে। ফলে প্রস্রাবের স্বাভাবিক রং ঘনীভূত হয়ে হলুদ রং ধারণ করে। তাই এমন হলে অবশ্যই বেশি করে জল খেতে হবে।
প্রস্রাবের রং যদি গাঢ় হলুদ হয়, সে ক্ষেত্রে জন্ডিসের হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকে যায়। যদি এমনটা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এ ছাড়াও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কিংবা মূত্রনালির সংক্রমণ দূর করার কোনও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলেও প্রস্রাবের রং হালকা কমলা বা হলুদ হতে পারে।
এছাড়াও আমাদের শরীরে যদি ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। তাহলে আমাদের প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। এক্ষেত্রে আমাদেরকে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। তা না হলে আমাদের শরীর আরো বেশি ডিহাইড্রেশন হয়ে যাবে। তখন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়বো। এজন্য প্রস্রাবের রং হলুদ হলে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
সকালে প্রস্রাব হলুদ হয় কেন
সকালে প্রস্রাবের হলুদ রং একটি সাধারণ ঘটনা এবং এটি প্রায়শই রাতারাতি ডিহাইড্রেশনের কারণে ঘটে। কারণ আমরা ঘুমানোর সময় শরীর অত্যাবশ্যক কার্য সম্পাদনের জন্য তরল ব্যবহার করে। যখন শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, তখন প্রস্রাব আরও ঘনীভূত এবং গাঢ় রঙের হয়ে যায়।
আপনার শরীরে পানির অভাব থাকলেই সাধারণত প্রস্রাব গাড় হলুদ হয়। রাতে পযাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে না ঘুমালে শরীর অনেক সময় ধরে পানির অভাবে কিডনি গাঢ় মূত্র তৈরী করে যা সামান্য হলুদ হয়।
সকালে এবং সারা দিন জল পান করা সঠিক হাইড্রেশন স্তর বজায় রাখতে এবং প্রস্রাবকে খুব বেশি ঘনীভূত হতে বাধা দিতে সহায়তা করতে পারে। আদর্শভাবে, একজন ব্যক্তির দিনে কমপক্ষে ৫ গ্লাস জল পান করা উচিত, বা যদি তারা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে বা গরম জলবায়ুতে থাকে।
জল খাওয়ার পরও যদি প্রস্রাব খুব অন্ধকার হতে থাকে তবে এটি একটি অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থা যেমন ডিহাইড্রেশন, লিভার বা কিডনি রোগ বা মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, সঠিক মূল্যায়ন এবং চিকিত্সার জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করতে হবে।
প্রসাবের রং কেমন হওয়া উচিত
একজন স্বাভাবিক এবং সুস্থ ব্যক্তির প্রস্রাবের রং সাদা স্বচ্ছ হয়ে থাকে। কিন্তু শরীরের যদি কোন হালকা অসুখ ও হয় তাহলে আমাদের প্রসাবের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। যদি শরীরে একটু হাইড্রেশন দেখা দেয় তখনই আমাদের প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয়ে হালকা হলুদ বা গাড়ো হলুদ হয়ে যায়।
যদি আপনার প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয়ে হলুদ বা কমলা বা বাদামী বর্ণের হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন আপনার শরীরে নতুন কোন রোগ বাসা বেধে বসে রয়েছে। এক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
একজন সুস্থ এবং স্বাভাবিক ব্যক্তির জন্য সর্বদা প্রস্রাবের রং সাদা স্বচ্ছ হওয়া উচিত। তাই শরীরকে রোগ মুক্ত করতে এবং পেশাবকে স্বচ্ছ করতে বেশি বেশি করে জল পান করবেন। এতে করে আপনার শরীরের হাইড্রেশন দূর হয়ে যাবে। বেশি করে জল পান করার ফলে শরীরে যদি বেশি পরিমাণ জল থাকে তাহলে সেটি শরীরকে হাইড্রেট হওয়া থেকে রক্ষা করে।
হলুদ প্রস্রাব থেকে মুক্তির উপায়
প্রস্রাব বা মূত্র হলো আমাদের শরীরের রক্তের ফিল্ট্রেট বা পরিস্রুত দ্রবন। রক্তের সকল বর্জ্য প্রতি সেকেন্ডে পরিস্রুত হয়ে মূত্র তৈরি করে। এই মূত্রের একটি অন্যতম উপাদান হল Urochrome বা ইউরোক্রোম যার কারণে আমাদের মূত্রের রং হলুদ রঙের দেখায়।
তবে হলুদ রঙের দেখানোটা স্বাভাবিক কিন্তু আপনি যদি অনেক সময় ধরে পানি পান না করেন বা মূত্র যদি অনেকসময় ধরে চেপে রাখেন তাহলে আপনার মূত্র গাঢ় হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। এর একমাত্র প্রতিকার প্রচুর পরিমানে পানি পান করা। দিনে গড়ে 2 থেকে 3 লিটার পানি পান করুন।
আপনার প্রস্রাব যদি প্রতিনিয়ত হলুদ হতে থাকে তাহলে এটি থেকে মুক্তির উপায় হলো আপনি ভালো ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিয়েন। কেননা যদি এটি প্রতিনিয়ত হতে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার শরীরে কোন না কোন রোগ বাসা বেধেছে যার ফলে এমনটি হচ্ছে। এজন্য ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া যদি আপনার প্রতিনিয়ত না হয়ে মাঝেমধ্যে হয় এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে হয় তাহলে আপনি বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন। কেননা আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের শরীর আরো বেশি হাইড্রেশন হয়ে পড়ে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠলে তখন আমাদের প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যায়।এমনটা হয় শুধুমাত্র শরীর হাইড্রেট থাকার জন্য।
প্রতিনিয়ত সুস্থ থাকার জন্য বেশি বেশি পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। তাই অবশ্যই বেশি বেশি পানি পান করবেন। নিজে সুস্থ থাকবেন এবং অন্যকে সুস্থ থাকার জন্য আহ্বান করবেন। মাঝে মাঝে প্রসাব হলুদ হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
প্রস্রাবের রং দেখে রোগ নির্ণয়
মানব দেহের প্রস্রাব শরীরের এমন একটি উপাদান যা শরীরের কোন রোগ বাসা বেধেছে তা নির্ণয় করা সম্ভব। আমরা মেডিকেলে গেলে প্রায় সময় দেখি অনেক রোগীকে প্রস্রাব টেস্ট করতে দেন। কিন্তু আমরা হয়তো কখনো লক্ষ্য করিনি যে এটা কিভাবে কাজ করে। আসলে ডাক্তাররা প্রস্রাবের রং দেখেই বুঝতে পারেন যে আপনার শরীরে কোন রোগের উপদ্রব হচ্ছে।
এছাড়াও ল্যাবে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।এজন্যই বলা হয় প্রসবের রং দেখে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। চলুন তাহলে জেনে নেই প্রস্রাবের রং কেমন হলে কি রোগ হতে পারে।
কমলা প্রস্রাবঃ এই রঙের প্রস্রাবের বেশ কিছু অর্থ হতে পারে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেও প্রস্রাবের রং কমলা হতে পারে। তবে যদি কমলা প্রস্রাবের সঙ্গে আপনার হালকা রঙের মলও হয়, তা হলে কিছুটা চিন্তার বিষয়। লিভারের সমস্যা থাকলে এমনটা হয়। যদি চার পাঁচ দিনের বেশি এমনটা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
ঘোলাটে প্রস্রাবঃ কিডনির সমস্যা বা ইউটিআই হলে প্রস্রাবের রং ঘোলাটে হয়ে যায়। তবে যদি মাঝেমাঝে আপনার ঘোলাটে প্রস্রাব হয়, তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই। খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি হলে এমনটা হতে পারে। কিন্তু যদি এটা প্রতিনিয়ত হতে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
গাঢ় হলুদঃ প্রস্রাবের রং যদি গাঢ় হলুদ হয়, সে ক্ষেত্রে জন্ডিসের একটা আশঙ্কা থেকে যায়। এ ছাড়াও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কিংবা মূত্রনালির সংক্রমণ দূর করার কোনও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলেও প্রস্রাবের রং হালকা কমলা বা হলুদ হতে পারে।
হালকা হলুদঃ শরীরে ইউরোবিলিন পিগমেন্ট উৎপাদনের কারণে সাধারণত প্রস্রাবের রং হালকা হলুদ হয়। সাধারণত জল কম খেলে প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। তবে শরীর যখন জলশূন্য হয়ে পড়ে, তখন কিডনি প্রস্রাব থেকে জল শোষণ করে। ফলে প্রস্রাবের স্বাভাবিক রং ঘনীভূত হয়ে হলুদ রং ধারণ করে।
গোলাপি প্রস্রাবঃ প্রসাবের রং গোলাপি হলে অনেকেই খুব ভয় পান। তবে সব সময় গুরুতর সমস্যার কারণেই এমনটা যে হয়, তা নয়। চারটি কারণে এটা হতে পারে। প্রস্রাবে রক্ত চলে এলে কিংবা কোনও বিশেষ ওষুধ বা টক্সিনের কারণে এমনটা হয়। টক্সিন, লেড বা পারদের কারণেও গোলাপি রঙের প্রস্রাব হতে পারে। তবে যদি রক্তের কারণে হয় তা হলে ইউটিআই, টিউমর, প্রস্টেটের সমস্যা, কিংবা কিডনিতে স্টোন হয়ে থাকতে পারে।
সবশেষে বলা যায় যে প্রসাবের রং দেখে অনেক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তবে যদি আপনার প্রতিনিয়ত প্রসবের রং পরিবর্তন না হয়ে মাঝে মাঝে হয় তাহলে কোন চিন্তার কারণ নেই। এমনটা হয় শুধুমাত্র হাইড্রেশনের জন্যে। এমন হলে বেশি করে পানি পান করবেন। আর যদি মাত্রা অতিরিক্ত হয় তাহলে অবশ্যই ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। সবাই সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url