বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের কি সমস্যা হয় - মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল কখন শুরু হয়
বয়সন্ধিকাল প্রতিটা কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিটা কিশোর-কিশোরী প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষে পরিণত হয়। তাই জানা প্রয়োজন বয়সন্ধিকালে মেয়েদের কি কি সমস্যা হয়, তাছাড়াও জানা প্রয়োজন মেয়েদের বয়সন্ধিকাল কখন শুরু হয়।
বয়সন্ধিকালে প্রতিটা কিশোর-কিশোরী অত্যান্ত ভয় থাকেন। নিজেদেরকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করতে থাকে। নিজের দেহের এইসব পরিবর্তন তাদের মন-মানসিকতা চেঞ্জ করে দেয়। তাই বয়সন্ধিকালের কৌতুহলী কিছু প্রশ্ন নিয়ে আজকের এই পোস্ট। এই পোস্টে কি কি জানতে পারবেন সেসব সূচিপত্রে দেওয়া রয়েছে। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন।
সূচিপত্র
বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে
জীবনের যে পর্যায়ে একটি শিশু একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হয়ে ওঠে এবং তার মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা সৃষ্টি হয় তাকে মূলত বয়সন্ধিকাল বলে। বয়সন্ধিকালে মেয়েদের কিশোরী এবং ছেলেদের কিশোর বলা হয়। বয়সের ক্রম অনুসারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বয়সন্ধিকাল আগে শুরু হয়।
অর্থাৎ জীবনের যে বয়সে এসে একটি শিশু একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পরিণত হয় হোক সে মেয়ে কিংবা ছেলে এবং তাদের মধ্যে যদি প্রজনন ক্ষমতা তৈরি হয় তাহলে তাকে বয়সন্ধিকাল বলে। এই বয়সন্ধিকাল প্রতিটা ছেলে এবং মেয়ের জীবনের সুন্দর একটি মুহূর্ত।
মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল কখন শুরু হয়
সাধারণত মেয়েদের বয়সন্ধিকাল শুরু হয় ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে এবং এটি স্থায়ী হয় ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত। এই সময়টাতে প্রতিটি মেয়েদেরই নানান ধরনের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এই সময়টাতে মেয়েদের শারীরিক যেসব পরিবর্তন ঘটে তাহলে-
- স্তন বৃদ্ধি পায়
- শরীরের লোম বৃদ্ধি পায়
- যোনিপথ দিয়ে রক্ত বের হয় (মাসিক)
- দেহের গঠন পরিবর্তন হয়
- মানসিক বিকাশ ঘটে
সাধারণভাবে একটি মেয়ের বয়সন্ধিকালের শুরুর লক্ষণ হল স্তন বৃদ্ধি হওয়া। স্তনের বৃদ্ধি সাধারণত ১০ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়ে যায়। স্তন বৃদ্ধির পাশাপাশি মেয়েদের আরও শারীরিক অন্যান্য যে অংশগুলো পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, সেগুলি হল-
- শরীরের লোম বৃদ্ধিঃ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশের লোম বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে।যেমন- বগল, উরু এবং তলপেটে।
- দেহের গঠন পরিবর্তনঃ স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি মেয়ের দেহের আকার ও গঠন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হলে মেয়েদের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের পেশী ও চর্বির পরিমাণ পরিবর্তন হতে থাকে।
- ঋতুস্রাবঃ সাধারণত ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়। ঋতুস্রাব বা মাসিক মূলত মেয়েদের শরীরের ডিম্বাশয় থেকে ডিম নিঃসরণের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
- মানসিক বিকাশঃ বয়সন্ধিকালের এই সময়টাতে মেয়েদের মানসিক বিকাশ ঘটে। যেমন- তারা নিজের স্বাধীনতা চায়, নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়, ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হয় ইত্যাদি।
প্রতিটি মেয়েরই বয়সন্ধিকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টাতে প্রতিটি মেয়েদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক পরিবর্তন ঘটে। এই সকল পরিবর্তনগুলি একটি মেয়েকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীতে পরিণত হতে সহায়তা করে।
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের কি সমস্যা হয়
শৈশব মানেই রঙিন মধুর কিছু স্মৃতি। এই স্মৃতিগুলোই সারা জীবন মনের পাতায় পাতায় আঁচড় কেটে রয়ে যায়। এ সময়ে কিশোরীদের পাড়ি দিতে হয় নতুন এক জগতে। তাই প্রতিটি কিশোরীদের এ সময়ে বাড়তি দেখাশোনা ও যত্নের প্রয়োজন পড়ে।
কৈশোরের এই সময়ে মেয়েদের যেমন মানসিক পরিবর্তন ঘটে তেমনি একইভাবে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। নিজের কথা কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। মনের কৌতুহলী কথাগুলো ভাগাভাগি করে নিতে পরিবারকে এই সময়ে বন্ধুরূপে পাওয়া অত্যন্ত জরুরী। এতে করে না জানা অনেক বিষয় জেনে নিতে পারবে।
আবার শারীরিক দিক লক্ষ্য করে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বাড়তি নজর রাখতে হবে। খুব বেশি টাইট পোশাক নির্বাচন না করে এ সময়ে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা প্রতিটি কিশোরীর জন্যই খুবই উপযোগী। এ সময়ে ভারী মেকআপ ব্যবহার করা যাবে না তাহলে ত্বকের নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এই সময় নিজেকে যথেষ্ট পরিমাণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতিদিন গোসলের সময় নিজের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে। সেই সাথে প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে এবং সেই সাথে নিজেকে মশ্চারাইজার ব্যবহার করে পরিপাটি রাখতে হবে।
এছাড়াও বয়সন্ধিকালের এই সময়টাতে খাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। খাবারের তালিকায় যেসব খাবারগুলো বেশি বেশি রাখতে হবে তা হলো- ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, শর্করা, আমিষ, প্রোটিন যুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। এতে করে সঠিকভাবে পুষ্টি পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। অন্ততপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা থেকে শুরু করে ফলমূল আর মৌসুমী শাকসবজি খেতে হবে। এতে করে হবে কি আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন এবং মানসিক ভাবেও প্রাণবন্ত থাকতে পারবেন।
মেয়েদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন। এ সময়ে মূলত মেয়েদের মাসিক চক্র শুরু হয়। তাই নিজেদের শারীরিক নানা পরিবর্তন নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন অনেকেই। নতুন এই কারণে অনেকেই ভয় পেয়ে তিনি সাহারা হয়ে যান। অন্যের সঙ্গে প্রকাশ করতে লজ্জা বোধ করেন।
যার ফলে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। এজন্য এই সময়ে ফ্যামিলির কাউকে বন্ধুসুলভ হিসেবে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি, এবং এই সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আগেই ভাষাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন অথবা প্যাড হাতের নাগালে প্রস্তুত রাখতে হবে। সেই সাথে এগুলো ব্যবহার সম্পর্কে বড়দের থেকে ভালোমতো জেনে নিতে হবে।
এইজন্য এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ফ্যামিলির বড় বোন অথবা মা যদি এই সময় বন্ধুসুলভ হয় তাহলে প্রতিটি কিশোরীর বেড়ে ওঠা অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। এগুলো যেহেতু একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তাই নির্দ্বিধায় বাড়িতে বড় বোন অথবা মায়ের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে হবে।
মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল কখন শেষ হয়
জীবনের যে পর্যায়ে একটি শিশু একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হয়ে ওঠে এবং তার মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা সৃষ্টি হয় তাকে মূলত বয়সন্ধিকাল বলে। বয়সন্ধিকালে মেয়েদের কিশোরী এবং ছেলেদের কিশোর বলা হয়। বয়সের ক্রম অনুসারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বয়সন্ধিকাল আগে শুরু হয়।
সাধারণত একটি মেয়ের বয়সন্ধিকাল শুরু হয় ১০ থেকে ১১ বছরের মধ্যে এবং সেই বয়সন্ধিকাল শেষ হয় ১৮ থেকে ১৯ বছর এর মধ্যে। এই সময়টাতে একটি শিশুকে একটি পরিপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক নারীতে পরিণত হতে দেখা যায়। অর্থাৎ বয়সন্ধিকাল প্রত্যেকটি শিশুকে প্রাপ্তবয়স্ক নারীতে বা পুরুষের পরিণত করে।
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন
যে বয়সে বা যে সময়ে প্রতিটি কিশোর-কিশোরী প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষে পরিণত হয়, মূলত সেই সময়টাই বয়সন্ধিকাল। এই বয়সন্ধিকালে মেয়েদের শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শুধু যে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তা নয় প্রতিটি ছেলেরও শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
বয়সন্ধিকালের এই সময়টাতে প্রতিটি মেয়েদের দেহে এক ধরনের হরমোন তৈরি হয়। , এই হরমোনের কারণে মেয়েদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আসুন জেনে নেই বয়সন্ধিকালে মেয়েদের শারীরিক যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়-
- উচ্চতা বৃদ্ধি পায়
- মাসিক শুরু হয়
- স্তন বড় হয়
- বগলে ও যৌনাঙ্গে লোম গজায়
- শরীর ভারী হয়, হাড় চওড়া ও দৃঢ় হয়
- দেহে চর্বির আধিক্য হতে পারে
- রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে
ব্যক্তি বিশেষে এইসব পরিবর্তন আগে বা পরে হতে পারে। পরিবর্তনের পরিমাণ একেকজনের ক্ষেত্রে একক রকম হতে পারে। এতে কোন চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এ সময় দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গ্রন্থি হতে হরমোন নিঃসরণ শুরু হয় বলেই এই পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করা যায়।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url